Sunday 27 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাবি টিএসসিতে রুম দখল নিয়ে আবৃত্তি ও নৃত্য সংসদের পালটাপালটি অভিযোগ

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুলাই ২০২৫ ২৩:৩৩

টিএসসি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে নৃত্য সংসদের নেতাদের বিরুদ্ধে একটি রুমের তালা ভেঙে রুম দখল চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন আবৃত্তি সংসদের নেতারা। তবে এ অভিযোগটি সম্পূর্ণ ‘বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যমূলক’ দাবি করে পালটা অভিযোগ তুলেছেন ঢাবির নৃত্য সংসদ। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিবৃতিও দিয়েছে টিএসসির ১৬টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শনিবার (২৬ জুলাই) সারাবাংলা ডটনেটের এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানান আবৃত্তি সংসদের নেতারা। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে অভিযুক্ত ব্যাক্তিরাও নিজেদের পক্ষে তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে আবৃত্তি সংসদের নেতাদের ওপর অভিযোগ তোলেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে আবুজার গিফারি কয়েকজন বহিরাগতকে সঙ্গে নিয়ে ওই রুমের তালা ভাঙেন বলে অভিযোগ তুলেন আবৃত্তি সংসদের সভাপতি মো. শাহ সুফি ওয়াসি মিয়া।

শাহ সুফি ওয়াসি বলেন, ‘নৃত্য সংসদের কোনো রুম না থাকায় প্রশাসন মানবিক বিবেচনায় আবৃত্তি সংসদের রুম ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়। কিন্তু সেখানে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আবুজার গিফারীর নেতৃত্বে ‘শিল্পতৈরি’ নামক একটি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে। তাদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও উঠেছে।’ আবৃত্তি সংসদ এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দিয়েছে বলে জানান তিনি।

ওয়াসী আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে টিএসসি পরিচালককে সহযোগিতা করতে দুজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দেয় এবং সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রুম তালা দিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘আবুজার গিফারী প্রশাসনের সিদ্ধান্ত না মেনে মব সৃষ্টি করে রুমের তালা ভাঙেন। পরে প্রশাসন আবার তালা দিয়ে দেয়।’

নৃত্য সংসদের সাবেক সভাপতি আবুজার গিফারী এ বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘টিএসসির এ রুমটি ডান্স ক্লাব এবং আবৃত্তি সংসদ উভয়কে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হলেও আবৃত্তি সংসদ এককভাবে রুমটি ব্যবহার করতে চায়। বিধায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব প্রচারণা চালাচ্ছে। টিএসসির ১৬টি সংগঠনের মিলিত সিদ্ধান্তে আমরা রুমটি খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও তারা এখন আমাদের কয়েকজনকে দোষ দিচ্ছেন। মূলত সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন একটি তালা দেওয়ার জন্য আমরা গিয়েছিলাম; যার একটি চাবি তাদেরকেও দেওয়া হতো।’

এ বিষয়ে আবৃত্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিজা বিনতে সামস সারাবাংলাকে বলেন, ‘টিএসসি প্রতিনিধি পদটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। তাই আমি এই পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি আবেদন করেছি।’

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৬ সংগঠনের সম্মিলিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রুমটি ফাঁকা হয় এবং টিএসসিতে সে সময়কার সকল নেতাদের সম্মতিতে রুমটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডান্স ক্লাবকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এতদিন পরে এসে হুট করে আবৃত্তি সংসদ রুমটিকে শুধুমাত্র নিজেদের বলে দাবি করে এবং ডান্স ক্লাবের নেমপ্লেটসহ সবকিছু মুছে দিয়ে নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। এটা নিতান্তই অযৌক্তিক। আবৃত্তি সংসদ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।’

আরও বলা হয়, ‘টিএসসি’র সংগঠনগুলো শুক্রবার বিকেলে সম্মিলিত সভার আহ্বান করে। সভায় উপস্থিত হতে আবৃত্তি সংসদের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের অনলাইন/অফলাইনে যোগাযোগ করার ক্রমাগত চেষ্টা চালায়। আবৃত্তি সংসদের নেতাদের যেখানে স্বেচ্ছায় সভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল, কিন্তু উনারা সবার যোগাযোগের সাড়া দেয় নাই। পরবর্তীতে সভায় উপস্থিত সবার সম্মতি এবং শুক্রবার দিন সংশ্লিষ্ট রুমে ডান্স ক্লাবের সেশন থাকার বিষয়টি বিবেচনায় সভায় কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।‘

সিদ্ধান্তগুলো-

আবৃত্তি সংসদের এমন কর্মকাণ্ডে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়।

ডান্স ক্লাবের কর্মশালা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট রুমটিকে পরবর্তী মিটিংয়ে আগ পর্যন্ত শুধুমাত্র ডান্স ক্লাবকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

দুটি সংগঠনের পারস্পরিক সমস্যাগুলো টিএসসি’র বাহিরে ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বাহিরে অবহিত করার জন্য পরবর্তী মিটিংয়ে ডান্স ক্লাব ও আবৃত্তি সংসদকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক একত্রে একটি ফল উৎসবের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়।

সম্মিলিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে সন্ধ্যায় আবৃত্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিজা’র সঙ্গে কথা বলেন চলচিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ্র দাস। পরবর্তীতে চলচিত্র সংসদের শুভ্র দাস, টুরিস্ট সোসাইটির সভাপতি সাইদ হাসান, আইটি সোসাইটির সভাপতি তৌহিদ হোসেন, গবেষণা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার সীমান্ত, ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি মহিবুর আলম সৈকত, ডান্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, আবৃত্তি সংসদের অর্থ সম্পাদক শাকিল হোসেন, আবৃত্তি সংসদের কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ ১৫-২০ জনের উপস্থিতিতে রুমে নতুন তালা স্থাপন করে ডান্স ক্লাব ও আবৃত্তি সংসদকে চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আবৃত্তি সংসদ এখন পর্যন্ত রুমটিকে শুধুমাত্র নিজেদের বলে দাবি করছে ও আক্রমণাত্মক অবস্থান ধরে রেখেছে। যেটা নিতান্তই অযৌক্তিক।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আরেকটা বিষয় দৃষ্টিগোচর হয়েছে, অনলাইন প্রচারণায় ‘তথাকথিত টিএসসি প্রতিনিধি’ শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, আবৃত্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিজা নিজেও একজন টিএসসি প্রতিনিধি। গত ৬ মে টিএসসি পরিচালকের উপস্থিতিতে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে চারজন প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত চারজন প্রতিনিধি হচ্ছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিজা বিনতে শামস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুইজ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাতাসিম বিল্লাহ ইমন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাকামনি।

টিএসসি’র সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক-সংগঠন সভায় উপস্থিত ১৬টি সংগঠনের নেতাদের বাইরে গিয়ে শুধুমাত্র মোহাতাসিম বিল্লাহ ইমন ও শাহরিয়ার নাজিম সীমান্ত’কে অনলাইনে বিস্তর অপপ্রচার এর মাধ্যমে লাঞ্ছিত করার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘রোববারে এই দুই সংগঠনের সঙ্গে টিএসসির পরিচালক বসবেন। আমাদের দুইজন সহকারী প্রক্টরও থাকবেন সেখানে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের আগে রুমটি ব্যবহার করতো সাংস্কৃতিক জোট নামের একটি সংগঠন। ফ্যাসিবাদ সংশ্লিষ্ঠতায় সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং আবৃত্তি সংসদকে রুমটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।’

সারাবাংলা/কেকে/এইচআই

আবৃত্তি নৃত্য সংসদ টিএসসি ঢা‌বি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর