Sunday 27 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনীতিতে নতুন সংকট পিআর, নিজ নিজ অবস্থানে সবাই অনড়

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুলাই ২০২৫ ২১:৪৭

পিআর পদ্ধতি। ফাইল ছবি

ঢাকা: গত ২৮ জুন ঐতিহহাসিক সোহওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে সংখ্যানুপাতিক ভোটের (পিআর) দাবি উচ্চকিত করেছে ইসলামী আন্দোলন। এর ২০দিন পর ১৯ জুলাই একই স্থানে একই দাবিতে মহাসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

রাজনীতির মাঠে এই মুহূর্তের বড় তিন দলের মধ্যে দু’টি দল সাংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের জন্য অনড় অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি কোনো অবস্থাতেই সংখ্যানুপাতিক ভোটে (পিআর) রাজি নয়। ফলে রাজনীতিতে নতুন সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পিআর পদ্ধতি।

দেশে নিবন্ধিত ৫০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টিসহ ১৮টি রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপিসহ পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান ২৮টি দলের। চারটি দল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কিছু দল আংশিকভাবে এই পদ্ধতির পক্ষে। বিপক্ষে থাকা দলগুলো মূলত বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে এই শঙ্কা কাজ করছে যে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলনের দাবির মুখে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পিআর পদ্ধতির পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারে। এরইমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান আলী রীয়াজ বলে রেখেছেন, ‘কোনো বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে, সেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে।’ আলী রীয়াজের এ বক্তব্যের পর পিআর ইস্যুতে বিএনপির মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

দলটির নেতারা শুরুর দিকে বিষয়টিকে হালকাভাবে নিলেও এখন এগুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলছেন। যেকোনো মূল্যে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নে বাধা দিতে চান তারা। শনিবার (২৬ জুলাই) এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আনুপাতিক নির্বাচন (পিআর) কী?— এটা জনগণ বোঝে না। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতিতে নিবার্চনের কথা বলছে। কিন্তু তারাও জানে না, পিআর পদ্ধতি কী? ফলে দেশে এখন একটা জগা-খিচুড়ি অবস্থা চলছে।’

সম্প্রতি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থায় মানুষ তার নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় একজন ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখে অভ্যস্ত। যিনি তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তাকে দেখেই ভোট দেয়। একাধিক প্রতিনিধি মানুষের মধ্যে ভোটের আগ্রহ কমিয়ে দেবে এবং কার্যকরী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো বিধানও এখানে নেই। একজন জনপ্রিয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি নির্বাচনে জয়লাভ করলেও কোথাও এমপি হতে পারবেন না। এ রকম বহুবিধ অসুবিধা আছে পিআর পদ্ধতিতে। এসব কারণে কোনোমতেই পিআর মানা সম্ভব না। সুতরাং পিআর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে রাজনৈতিকভাবে তা মোকাবিলা করা হবে।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, বড় কোনো দল ৪০ শতাংশ ভোট পেলেও পিআর পদ্ধতিতে ৩০০ আসনের মধ্যে ১২০ আসন পাবে। সেক্ষেত্রে তারা এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে না। তাদের কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হবে। পক্ষান্তরে ক্ষুদ্র একটা দল ১০ ভাগ ভোট পেলে ৩০টি আসন পেয়ে যাবে। ৫ ভাগ পেলে ১৫টি আসন পাবে। এখন এসব দলের চাপে পিআর পদ্ধতি চালু হলে আইন প্রণয়ন ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে।

বিএনপির এই যুক্তির পাল্টা যুক্তি হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরাবরই বলে আসছে, জনগণের প্রত্যেকটি ভোটের মূল্যায়ন করতে হলে পিআর পদ্ধতির কোনো বিকল্পল নেই। পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে প্রতিটা ভোটের সমান মূল্যায়ন হবে। সংসদে সবার প্রতিনিধিত্ব থাকবে। পাঁচ শতাংশ ভোটের মালিকও সংসদে গিয়ে ভোটারদের হয়ে কথা বলতে পারবে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে ভোট হলে একটি বা দুটি দলের কাছে রাষ্ট্র জিম্মি হয়ে যাবে।

জানতে চাই ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা থেকে সর্বদলীয় ব্যবস্থায় ফিরতে পিআর পদ্ধতির কোনো বিকল্প নাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পিআর পদ্ধতি চালু আছে। আমরা পিআর পদ্ধতির পক্ষে জনমত তৈরি করেছি। দেশের বেশিরভাগ দল এবং অধিকাংশ জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে। এ ব্যাপারে আমরা কোনো ছাড় দেব না।’

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্ব চন্দ্র রায় সারাবংলাকে বলেন, ‘এদেশের মানুষ প্রার্থী দেখে প্রতীকে ভোট দেয়। পিআর পদ্ধতিতে কোনো প্রার্থী থাকবে না। কেবল প্রতীক থাকবে। এটা অবাস্তব একটা চিন্তা। আমাদের মনে হচ্ছে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে জনগণই শেষ কথাটা বলবে। বড় দল হিসেবে আমরা জনগণের পাশে থাকব।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

ইসলামী আন্দোলন এনসিপি জামায়াত পিআর পদ্ধতি বিএনপি ভোট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর