Sunday 27 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আওয়ামী শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল’

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৭ জুলাই ২০২৫ ১৫:২০

ঢাবির নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে প্রথম জুলাই বিপ্লব আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত।

ঢাকা: বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

রোববার (২৭ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত প্রথম জুলাই বিপ্লব আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (আইসিজেআর-১) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

এর আগে, জুলাই বিপ্লবে শহিদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের মা বিলকিস জামান ও বাবা শামসুজ্জামান বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় তারা সকল শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শহিদদের সনদ দাবি করেন।

বিজ্ঞাপন

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও এ সম্মেলনের আহ্বায়ক ড. মো. শরীফুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্যে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৪-এর জুলাই বিপ্লব কেবল একটি প্রতিবাদ নয়, এটি ছিল বাংলাদেশের যুবসমাজের একত্রিত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, আমেরিকার স্ট্যাস্ট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ জন এফ. ডেনিলোইজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ।

বক্তব্য প্রদানকালে আদিলুর রহমান বলেন,”আমরা আজ যে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের পতন দেখেছি, সেটার নিষ্ঠুরতা আমাদের বিবেককে সামগ্রিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এই শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল। শুধু তাই নয় র‍্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সন্ত্রাসের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল। গুম-খুন হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ছাত্রনেতাদেরকে ‘অপরাধী’ হিসেবে জেলে ভরা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্ত চিন্তায় বাঁধা দেওয়া হতো।”

জুলাই বিপ্লবের প্রথম আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনকে শুধু আলোচনা নয়, বরং একটি ‘সাক্ষ্য প্রমাণে’র প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা বিকৃত ইতিহাস থেকে সত্যকে উদ্ধার করতে চাই। যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের পরিবারদের কান্না, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে গেঁথে থাকা গুলির চিহ্ন—এসবই একদিন ন্যায়বিচারের নির্মাণকাজে প্রমাণ হয়ে উঠবে।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশ সংকটাপন্ন উত্তরণের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনই ন্যায়বিচারের গ্যারান্টি নয়। এক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের বিচারব্যবস্থাকে ভয়মুক্ত করতে হবে, নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কারসহ ছাত্র আন্দোলনকে যেকোনো দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা করতে হবে।”

আদিলুর রহমান তার বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারও সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর শ্রেণীকক্ষগুলো হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের কেন্দ্র, ছাত্ররা হয়ে উঠেছিল বিবেকের যোদ্ধা। আমরা বিদেশি গবেষক, অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ, যারা বিপদজনক সময়েও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।”

বক্তব্যের শেষে তিনি এই সম্মেলনকে একটি ‘জাতীয় অঙ্গীকারে’ পরিণত করতে জুলাই বিপ্লবের দলিলপত্র, ভিডিও, ফটো নিয়ে একটি আর্কাইভ গড়ে তোলা, স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে জুলাই ইতিহাস সত্যনিষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অংশে ‘ইন্ডিয়ান হেজিমোনি এন্ড জুলাই রেভোলিউশন ২০২৪’ শিরোনামে কী-নোট বক্তব্য প্রদান করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কোনো দানশীলতা নয়, বরং সূক্ষ্ম একটি ভূ-রাজনৈতিক হিসাব ছিল বলে উল্লেখ করে তিনি তার বক্তব্যে বলেন,” ভারত ভেবেছিল পাকিস্তান ভেঙে গেলে বাংলাদেশ ভারতের অনুগত হবে। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল যে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ জনগণ মুসলিম, যারা কখনোই হিন্দু-প্রধান ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশে ইসলামী পরিচয়ের পুনরুত্থান ঘটে।”

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ভারত এদেশে তাদের অনুগত সরকার প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা হুমকি নিয়ন্ত্রণ, ভূ-প্রাকৃতিক সুবিধা ব্যবহার, দ্বিপক্ষীয় সমাধান ও সুরক্ষা যন্ত্র হিসেবে কাজ করার এই পাঁচটি লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ পায় বলে উল্লেখ করেন মাহমুদুর রহমান।

এ সময় তিনি বলেন,” ভারত নিজে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হয়েও বাংলাদেশে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সমর্থন করে। কারণ তারা মনে করেছিল যে শেখ হাসিনার মাধ্যমেই তাদের লক্ষ্য পূরণ হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটে ভারতের সমর্থনই এই প্রমাণ করে।”

তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবকে ধর্মনিরপেক্ষ, ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের এক অনন্য সংমিশ্রণ যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এই বিপ্লব শুধু আমাদের দেশেই নয় বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। “

বক্তব্য প্রদানকালে আমেরিকার স্ট্যাস্ট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ জন এফ. ডেনিলোইজ বলেন, “জুলাই বিপ্লব কোনো বিদেশী শক্তি বা গভীর রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের ফল নয়। এটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব সংগ্রামের ফসল। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীদের কাছে প্রমাণ দেয়া কঠিন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ এতে জড়িত ছিল না। আজ পর্যন্ত আমি এমন কোনো প্রমাণ দেখিনি। যদি এমন কোনো প্রমাণ কারো কাছে থাকে আমি সেটা দেখাতে চ্যালেঞ্জ করছি। তিনি আরো বলেন, বিপ্লব সফল হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অস্থিতিশীলতা পরিবেশ ও তথ্য যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে যা এখনও চলমান রয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।”

সারাবাংলা/কেকে/এসডব্লিউ

আদিলুর রহমান খান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

বিজ্ঞাপন

আহারে জীবন
২৭ জুলাই ২০২৫ ১৭:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর