ঢাকা: অনেক আগে থেকেই পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির কমিটমেন্ট আছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে ব্রাক সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। ‘‘একটি দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা’’ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করে পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যে পদ্মা ব্যারেজ এবং দ্বিতীয় পদ্মা সেতু— এটার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করবার উপায় নেই। একইসঙ্গে যে জেলাগুলো অ্যাফেক্টেড, যেসব জেলার মানুষগুলো ব্যারেজ এবং সেতুর জন্য অপেক্ষা করছে, তাদের প্রয়োজনটা আমরা এখানে উপলব্দি করেছি। একইসঙ্গে এর ক্লাইমেটিক যে কন্ডিশন, সেটা কী দাঁড়াবে, এতগুলো মানুষ, প্রায় ৮ কোটি, ৯ কোটি মানুষের জীবন জীবিকা— কার কী অবস্থা দাঁড়াবে, সব কিছু মিলে এই পদ্মা ব্যারেজ ও পদ্মা সেতুর যে প্রয়োজন, সেটা আমরা উপলব্ধি করেছি।
‘‘একইসঙ্গে আমরা এটাও উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি, প্রায় সাতবার এর (পদ্মা ব্যারেজ, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু) ভিজিবিলিটি স্ট্যাডি হয়েছে। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত সেটা নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তের জায়গায় আসতে পারিনি। আমাদের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন অত্যন্ত জোর দিয়ে, আমিও কথাটা বলতে চাই অত্যন্ত জোর দিয়ে এই কাজগুলোর জন্য প্রয়োজন পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। রাজনৈতিক কমিটমেন্টই সবচেয়ে বেশি দরকার। আর তখনই জোরাল হবে যখন সেটা জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসবে’’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘আমি খৈয়মকে বলছিলাম বিষয়টা নিয়ে গোটা অঞ্চলে জনগণের মধ্যে একটা জাগরণ তৈরি করতে। যেটা আমাদের মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে মার্চ করে শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে সামনে নিয়ে এসেছিলেন।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে পদ্মা ব্যারেজ শুধু ফরিদপুর-রাজবাড়ি এলাকার মানুষের দাবি নয়। পুরো দক্ষিণাঞ্চলের দাবি। সুতরাং ওই অঞ্চলের মানুষদের আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব স্তুরের মানুষদেরকে তাদের সেই দাবি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াতে হবে। যে সরকারই আসুক এটা আমাদের চাই। অনেক আগে থেকেই দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নিয়ে আমাদের কমিটমেন্ট আছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মনে করি সব কিছু নির্ভর করবে মানুষের ওপরে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা তারও পূর্বে ৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করেছি, ৬৯ এ আন্দোলন করেছি এবং সব শেষে দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছেছি জুলাই-অগাস্ট মাসে। সুতরাং আমরা পারি। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে আমরা পারব। আমার দেশের মানুষের পালস আমরা বুঝি। আমাদের দেশের মানুষ উপরে উঠতে চায়, উন্নতি চায়। একটা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক দেশ চায়। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই সব কিছুর পথ খুজে পাওয়া যাবে।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি। আজকে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই অভূতপূর্ব ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে। এই ঐক্য যদি ধরে রাখতে পারি, তাহলে আমরা সফল হব।’’
পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ওমর খৈয়মের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, ব্রাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।