ঢাকা: পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) এর সঙ্গে তৃতীয় দফায় আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই সরাসরি বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ। প্রয়োজনে ৩১ জুলাইও একটি সভা হতে পারে। অনুষ্ঠেয় এ আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব অংশ নেবেন। এদিকে এ আলোচনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
রোববার (২৭ জুলাই) সচিবালয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ।
বাণিজ্য সচিব জানান, আলোচনায় অংশ নিতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেবে। যেহেতু তাদের সাথে আলোচনা চলছে, ১ আগস্টের মধ্যেই হয়তো শুল্কের বিষয়ে ফলাফল হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, শুল্ক চুক্তির খসড়া পাওয়ার পর কয়েক দফায় আমরা কাজ করেছি। ওয়াশিংটনে দুই দফা সরাসরি এবং অনলাইনে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২৩ জুলাই আমরা আমাদের চূড়ান্ত অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি।

ছবি : প্রতীকী ও সংগৃহীত
বোয়িং কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অতি দ্রুত কিছু বোয়িং দরকার। আমাদের ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার, হ্যাঙ্গার বোয়িং নির্ভর। তাই বোয়িং কিনতে হবে। বাংলাদেশ বিমানের বহর বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এয়ারবাস বা অন্যান্য বিমান যে কিনব না, তেমন নয়। এ পরিকল্পনা সরকারের আগে থেকেই ছিল। আগে ১৪টি বোয়িংয়ের অর্ডার ছিল। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকেই কেনা হবে সেটি বলা হয়নি। রেসিপ্রোকাল ইস্যুতে ২৫টি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে বাণিজ্য সচিব বলেন, বোয়িংয়ের ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্র সরকার নয়, বোয়িং কোম্পানি করে। বাংলাদেশ বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছে। ভারত, ভিয়েতনাম ১০০টি করে অর্ডার দিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া দিয়েছে ৫০টি। এরকম অর্ডার বিভিন্ন দেশ দিয়েছে। বোয়িং কোম্পানি তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সরবরাহ করবে। অর্ডারের বোয়িং পেতে সময় লাগবে। আগামী দু-এক বছরের মধ্যে হয়ত কিছু বিমান পাওয়া যাবে। যাকে আগে অর্ডার দিয়েছে তাদের আগে দেবে কিংবা প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী বিমান সরবরাহ করবে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, সেজন্যই রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেছে। দেশটির সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ইতোমধ্যে দেশটি থেকে গম আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে তুলা ও সয়াবিন আমদানির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা সয়াবিন আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তুলা আমদানি নিয়ে আগেই আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গম আমদানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে বছরে প্রায় ৯ মিলিয়ন টন গম আমদানি করা হয়। কখনোই একটি দেশ থেকে পুরোটা আনা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি হতো। এখন রেড সি [লোহিত সাগর] এলাকায় পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা আগের মতো নেই। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার ওপর নির্ভরশীলতা রাষ্ট্রীয় স্বার্থেই প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, রাশিয়া, ইউক্রেন থেকে গম আনা হয়। কিন্তু তারা আমাদের কাছ থেকে নেয় না। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৮ বিলিয়ন কেনে। যারা আমার কাছ থেকে কেনে, সুতরাং তার কাছ থেকেও আমাদের কেনা উচিৎ। আমাদের একটু অগ্রসর হওয়া উচিৎ। বেসরকারি খাতকে অনুরোধ করেছি সেখান থেকে কিনে শুল্ক ইস্যুতে সহায়তার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির কারণে বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুবিধা আছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন জিনিস আমদানি করা হয়। অসুবিধা থাকলে ব্যবসায়ীরা আনতো না। সরকার কাউকে চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন জিনিস কেনার প্রভাব বাজারে পড়বে না।
চীন থেকে উৎপাদন স্থানান্তরের বিষয় উল্লেখ করে সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপের কারণে চীনের ওপর প্রভাব বেশি পড়ছে। উৎপাদন অন্যত্র স্থানান্তরের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশও সুযোগ নিতে পারে।
তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি শুল্কের শিকার হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম বা ভারতের মতোই সুবিধা পাবে বাংলাদেশ—এমনটাই প্রত্যাশা।