Monday 28 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লোডশেডিংয়ে উদ্যোক্তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত ব্যয় ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ জুলাই ২০২৫ ১৯:৫২

সোমবার রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার ও সানেম আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি’ বিষয়ক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভা – ( ছবি : সংগৃহীত )

ঢাকা: দেশের বৃহৎ  শিল্প-কারখানাগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ কিছুটা ঠিক থাকলেও এসএমই শিল্পে জ্বালানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বৃহত্তর গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা লোডশেডিং চলেছে। এর ফলে প্রতিদিন উদ্যোক্তাদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি’ বিষয়ক ফোকাস গ্রুপ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।  ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)  যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (বিইপিআরসি)’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন এনডিসি।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, জ্বালানী সক্ষমতা বাড়াতে আমাদেরকে সামগ্রিকভাবে অভ্যাসগত পরিবর্তন আনতে হবে।সমসাময়িক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিত বিবেচনায়, দেশের বেসরকারিখাত যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে, সেই সাথে শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন মানসম্পন্ন জ্বালানি সরবরাহ না থাকার কারণে আমরা পণ্য উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ছি, ফলে আমাদের প্রতিযোগিত সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। শিল্প-কারাখানায় নিয়মিতভাবে ‘এনার্জি অডিট’ বাস্তবায়নের উপর তিনি জোরারোপ করেন। এছাড়াও তিনি শিল্পের খাত-ভিত্তিক গবেষণায় শিক্ষাখাতকে সম্পৃক্তকরণ এবং প্রয়োজনীয় ‘ইন্ডাস্ট্রি ম্যাপিং’-এর আহ্বান জানান।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশে জ্বালানি দক্ষতা নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা নেই।  তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্বালানি দক্ষতার সংজ্ঞাগত ও ধারণাগত পার্থক্য রয়েছে। এছাড়া দেশের জ্বালানীর উৎস ও সরবরাহে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি দক্ষতার বিষয়ে গৃহীত পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা এবং শিল্পখাতে এ বিষয়ে কী ধরনের প্রনোদনা দেয়া হয়েছে এবং কতটা কার্যকর হয়েছে সেটি অনুসন্ধান করে দেখা উচিত।  সেইসাথে এখাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল (বিইপিআরসি)’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন বলেন, জ্বালানি ভিত্তিক তথ্য প্রচার ও প্রাপ্তিতে একটা গ্যাপ রয়েছে, যার ফলে এবিষয়ক অনেক সরকারি সেবা সম্পর্কে দেশের বেসরকারিখাত অবগত নয়, এটি দূর করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের বেসরকারিখাতের আর্থিক সক্ষমতা বেশ বেড়েছে, তাই জ্বালানি বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমের অর্থায়নে বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে এখাতের নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, ভোক্তাদের সচেতনা বৃদ্ধি সহ সর্বোপরি একটি টেকসই ব্যবসা বান্ধব জ্বালানি পরিকল্পনা প্রণয়নে সক্ষম হবে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান, নিউএইজ গ্রুপ আসিফ ইব্রাহীম বলেন, দেশের বৃহৎ শিল্প-কারখানাগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ থাকলেও, বিশেষকরে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা জ্বালানি স্বল্পতার কারণে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও ঋণ প্রাপ্তি প্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে তারা অর্থায়ন সমস্যায় মুখোমুখি হচ্ছেন, যার আশু সমাধান প্রয়োজন।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ)’র সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, এলএনজি আমদানিতে বেসরকারিখাতে অধিকহারে সম্পৃক্তকরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণের হার হ্রাস পাচ্ছে, বিষয়টি উদ্বেগজনক। এমতাবস্থায় তিনি জ্বালানি আমদানি উৎসের বহুমুখীকরণের উপর জোর দেন। একই সাথে সবুজ অর্থায়নের ব্যাপ্তি বাড়ানোর আহ্বান জানান, তবে এলএনজি নির্ভরতা হ্রাস করতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন।
বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, নতুন শিল্প স্থাপনে জ্বালানির উচ্চ মূল্য দেশের শিল্পায়ন বিকাশে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। তিনি জানান, বৃহত্তর গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা লোডশেডিং চলেছে, ফলে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা। তিনি জানান, শিল্প-কারখানায় ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা গেলে ২২০ মেগাওয়াট জ্বালানি সাশ্রয় সম্ভব হবে, তবে সোলার প্যানেল আমদানি শুল্ক সুবিধা না থাকায় উদ্যোক্তাদের বেশি দাম প্রদান করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইএইচটি/আরএস

জ্বালানি খাত ঢাকা চেম্বার-সানেম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর