ঢাকা: দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান সহিংসতা, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’ উদ্যোগে দিনব্যাপী জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদের শহিদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সভাকক্ষে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগঠনটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
এ সময় শিক্ষাঙ্গনের মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা তরুণদের দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়াতে অ্যাডভোকেসি, তথ্যসংগ্রহ, নিরাপত্তা কৌশল ও সংগঠিত প্রতিরোধ গঠনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় কানাডার রেজিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ বলেন, ‘মানবাধিকার রক্ষায় তিনটি মূল বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথমত, সহিংসতার ব্যাপক ধারণা রাখতে হবে। আপনি যদি শুধু শারীরিক সহিংসতার দিকেই দেখেন, তাহলে শুধু বরফের চূড়াই দেখছেন। নিচে লুকিয়ে আছে অনেক বড় বড় সমস্যা-বুলিং, যৌন নির্যাতনের বিভিন্ন স্তর। এমনকি পুরুষ দ্বারা পুরুষের ওপর যৌন নির্যাতনও। এগুলোকে মাথায় রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘দ্বিতীয়ত, ভিকটিমের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভিকটিমের ডেটা, সুরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য— সবকিছু আপনার সংগঠনের ‘কার্ডিনাল রুল’। এটা নিয়ে কখনোই আপস করা যাবে না। যদি আপস করেন, তাহলে সংগঠন টিকে থাকবে না।’’
তিনি সবশেষ বলেন, ‘নিরাময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কাউন্সেলিং একটি দারুণ উপায়। আপনি কাউন্সেলর ও ফার্স্ট রেসপন্ডার ট্রেইন করতে পারেন। জটিল কেসগুলো মানসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠাতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করুন।’
এ সময় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শায়েখ মাহদী বলেন, ‘সমাজে নির্যাতনের যে বিষয়টা- এটা দুটা মাধ্যমে সমাপ্ত হতে পারে। একটা উপায় হচ্ছে ওই সমাজের সকল লোককে ফেরেশতার মত ভালো মানুষে পরিণত হতে হবে। অথবা ওই সমাজের একটা পর্যায়ের মানুষকে নির্যাতকদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। আমরা গত ১৫ বছর কিংবা তারও আগে কিংবা এখনো নির্যাতক যারা, তাদেরকে যথাযথ জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারি নাই। হতে পারে যে তখন আমাদের চাপ ছিল। আমাদের সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু এখন সকল নির্যাতককে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’
নির্যাতক হয়ে উঠার পেছনে একটা ইকোসিস্টেম কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরো একটা ইকোসিস্টেম নির্যাতক হয়ে উঠতে এবং নির্যাতক হিসেবে তার ভূমিকা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। শিক্ষক এমনকি হলের যে আপনার মেসের কর্মচারীটা পর্যন্ত তাকে সালাম দিচ্ছে। তাকে প্লেটে এগিয়ে দিচ্ছে, তার জন্য খাবার বেশি নিয়ে আসতেছে। সবাই তাকে একদম একটা নির্যাতক হিসেবে তার অবস্থানটা তৈরি করতে সাহায্য করে।’
এখন থেকে প্রতিটা নির্যাতনের বিরুদ্ধে একশন নিতে হবে বলে শায়েখ মাহদী বলেন, ‘নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে আপনারা ব্যবস্থা নিবেন। এই না যে কোর্টে গিয়ে মামলা করে ফেলি বা তাকে আমরা ধরে চারজন মিলে একটু পিটায় দেই, নট লাইক দ্যাট। ব্যবস্থা নিতে হবে গঠনমূলকভাবে, যাতে নির্যাতককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।’