ঢাকা: গেল এক বছর ধরে চাল ও সয়াবিন তেলের বাজার ভোক্তাদের চরম অস্বস্তিতে রেখেছে। চালের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ থেকে ২৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই দুটি পণ্য চরম অস্বস্তিতে রাখলেও চিনি, ডাল ও মসলাজাতীয় পণ্যের দাম কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বছর ব্যবধানে চিনির দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমেছে। এছাড়া, মসুর ডাল কেজিতে ১০ টাকা ও ছোলা ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। গত বছরের তুলনায় পেঁয়াজের দাম প্রায় ৫০ টাকা কম রয়েছে। একইভাবে, রসুন ও আদার দামও কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যকে ভিত্তি করে চলতি বছর ও গেল বছরের ২৫ জুলাইয়ের বাজারদর বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সম্প্রতি সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, দেশের বাজার তদারকি ব্যবস্থা আগের চেয়ে আরও নাজুক হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাজারে পূর্বের মতোই সিন্ডিকেট ও কারসাজি বিদ্যমান এবং সরকারের তদারকি কার্যক্রম অপেক্ষাকৃত স্থবির।
তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করতে পারছে না। তার মতে, সামগ্রিকভাবে বাজার ব্যবস্থাপনার কোনো উন্নতি ঘটেনি। সিন্ডিকেট ও কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কেবল তাদের রূপ বা দল পরিবর্তন করেছে, যার ফলে বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত হয়নি; বরং বাজারে সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী হয়েছে।’
বছর ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা
বর্তমানে (২৫ জুলাই) সরু চাল (নাজির ও মিনিকেট) ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছরের একই সময়ে তা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭৮ টাকা কেজিতে। ফলে বছর ব্যবধানে সরু চালের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১৫ টাকা।
বর্তমানে মাঝারি চাল (পাইজাম ও আটাশ) বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। গেল বছরের একই সময়ে দাম ছিলো ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। বছর ব্যবধানে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ১২ টাকা।
মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে, গেল বছর একই সময়ে দাম ছিলো ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। বছর ব্যবধানে এই চাল কিনতেও বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা।
সরকারি সংস্থার তথ্যমতেই, বছর ব্যবধানে সব ধরণের চালের দাম বেড়েছে। কেজি প্রতি ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। যদিও মিনিকেট চালের দাম উঠেছিলো ৯০ থেকে ৯৫ টাকার ঘরে। চলতি বছরের মার্চে মিনিকেট চাল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়। তবে মাঝে চালের দাম আরও কিছু কমলেও ফের চালের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে।
চালের বাজার প্রসঙ্গে ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘চালের দাম বৃদ্ধি একদম অস্বাভাবিক। ভরা মৌসুমে দেশে দাম বাড়ার অতীত ইতিহাস কিন্তু নেই। ব্যবসায়ীরা দেখছে, সরকারের তদারকি কম, যেহেতু আইনের প্রয়োগ ঢিলেঢালা রয়েছে, এই সুযোগটাকে তারা কাজে লাগাচ্ছে। কোন কিছু হলেই তারা চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা গত মৌসুমেও দেখলাম, যাদের চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিলো, তাদের অধিকাংশ চাল আমদানি করেনি। তারা এনলিস্ট হয়ে পরে চাল আনেনি, এই চর্চা আগেও ছিলো, এ কারণে তারা বাজারে চালের সংকট তৈরি করতে পারছে। এসব কারণে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে।’
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মৌসুম শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যেই বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে। মাত্র এক মাস চালের দাম কম ছিলো। নতুন মৌসুম আসতে এখনও চার মাস বাকি রয়েছে। চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে বাজারে বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানির প্রবেশ। তারাও এখন চালের ব্যবসা করছে। মৌসুমের শুরুতে তারা সব চাল কিনে নিতে চায়। ফলে ছোট ছোট মিলাররাও ধানের সংকটে থাকে। ফলে মৌসুম শেষ হওয়া মাত্রই চালে দাম বেড়ে যায়, যা আগে কখনও ঘটতো না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ৯ লাখ মেট্রিক চাল আমদানি করবে বলে শুনেছি। এটি ভোক্তাদের জন্য সুখবর। আমার মতে আরও বেশি করে চাল আমদানি করা উচিৎ। তাহলে মুজদ করে বাজারে চালের দাম কেউ বাড়াতে পারবেনা।’
চালের দাম বাড়লেও স্থির ছিল আটা ও ময়দার বাজার
টিসিবির তথ্যমতে, বর্তমানে খোলা সাদা আটা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছরও একই দাম ছিলো। প্রতি প্যাকেট আটা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছরের একই সময়েও দাম একই ছিলো। খোলা ময়দা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি ও প্যাকেট ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছরের তুলনায় ময়দার দামেও কোন পরিবর্তন আসেনি।
বছর ব্যবধানে তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া
বছর ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। আর প্রতি লিটার পামওয়েলে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এই সময়ে প্রতি লিটার বোতল জাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৩ টাকা। আর ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা। একই সময়ে ৫ লিটার রাইস ব্রানের দাম বেড়েছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা।
টিসিবির তথ্যমতে, লুজ প্রতি লিটার সয়াবিন তেল এখন ১৬২ থেকে ১৭০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছরের একই সময়ে দাম ছিলো ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা। বছর ব্যবধানে লুজ সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ১৭ টাকা। বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৯০ থেকে ৯২০ টাকা, গেল বছরের একই সময়ে দাম ছিলো ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা। বছর ব্যবধানে ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, গেল বছর একই সময়ে দাম ছিলো ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকা। বছর ব্যবধানে প্রতি লিটার বোতল জাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৩ টাকা। আর প্রতি লিটার পাম ওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়, গেল বছর দাম ছিলো ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। বছর ব্যবধানে লিটার প্রতি পামওয়েলে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
৫ লিটার রাইস ব্রানের বোতল এখন ১ হাজার ৩০ থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা, গেল বছরের একই সময়ে কেনা যেতো ৮৬০ থেকে ৮৮০ টাকায়। বছর ব্যবধানে ৫ লিটার রাইস ব্রানের দাম বেড়েছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। ফলে সব ধরণের ভোজ্য তেলে ক্রেতাদের বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। বছর ব্যবধানে ভোজ্যতেল ক্রেতার সবচেয়ে বেশি পকেট কাটছে।
তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি গোলাম মাওলা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের ভোজ্য তেলের বাজার কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি। টিসিবির জন্য সরকারও এখন তাদের কাছ থেকে তেল কিনছে। আবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সরকারই দাম নির্ধারণ করে। ফলে এ বাজার কার নিয়ন্ত্রণে সেটি সহজেই অনুমেয়।’
তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেল আমদানি, পরিশোধন ও বিপননেনের সঙ্গে জড়িত কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ভাষ্য ডলারের দাম বেড়েছে। এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে হুতিদের আক্রমণ। সমুদ্রপথে অনেক বিকল্প পথ পাড়ি দিয়ে তেল আমদানি করতে হয়। এরফলে তাদের জাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে। এসব কারণে তেলের দাম বাড়ছে বলে কোম্পানিগুলোর দাবি। যদিও বিশ্ববাজারে এখন ভোজ্যতেলের দাম খানিকটা কমেছে।’
জানতে চাইলে ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘দেশে সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয়নের পক্রিয়া সঠিক নয়। দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে তারা একটি গড় বিশ্লেষণকে ভিত্তি ধরে। এখন যদি দর নির্ধারণ করতে চায়, তাহলে গত ৬ মাসের দামের একটি গড় দেবে। যেসময় বাড়তি দাম ছিলো, সেটিকে ধরে গড় ক্যালকুলেশন করবে। এটি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি। যেটি ধরে হিসাব করতে সুবিধা ব্যবাসায়ীরা তাকেই ভিত্তি ধরে হিসাব করে। ফলে সয়াবিন তেলের দাম বেশি থাকে। আর সয়াবিন তেলের আমদানিকারকও মাত্র কয়েকজন। তারা বাল্ক এমাউন্টে আমদানি করে। ফলে তারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। ফলে সয়াবিন তেল গেল কয়েক বছর ধরেই ক্রেতাদের অস্বস্তিতে রাখছে। গেল এক বছরেও এই চিত্রে পরিবর্তন আসেনি।’
দাম কমেছে মুসর ডাল ও ছোলার
টিসিবির তথ্যমতে, বড় দানার মুসর ডাল ৯৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গেল বছর একই সময়ে দাম ছিলো ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। ফলে বছর ব্যবধানে দাম কমেছে ১০ টাকার মতো। মাঝারি দানার মসুর ডাল গত বছর ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১২০ টাকা। ফলে এ ধরণের মুসর ডালের দামও কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল বর্তমানে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গেল বছরও দাম একই ছিলো। এ্যাংকর ডাল বর্তমানে ৫৫ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গত বছরের একই সময়ে দাম ছিলো ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ফলে বছর ব্যবধানে এ্যাংকর ডালের দাম কমছে ১০ থেকে ২৫ টাকা। বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে, গেল বছর ১১০ থেকে ১২০ টাকা। বছর ব্যবধানে ছোলার দাম কমেছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা।
মসলা জাতীয় পণ্যে স্বস্তি
বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। গেল বছরের একই সময়ে দাম ছিলো ১০৫ থেকে ১২০ টাকা। গেল বছরের চেয়ে বর্তমানে পেঁয়াজের দাম কম রয়েছে কেজি প্রতি প্রায় ৫০ টাকা। বর্তমানে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে, গেল বছর দাম ছিলো ২০০ থেকে ২২০ টাকা। ফলে গত বছরের তুলনায় দেশি রসুনের দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা কম রয়েছে। বর্তমানে আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে, গেল বছর দাম ছিলো ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। ফলে আমদানি করা রসুনের দাম গেল বছরের তুলনায় বর্তমানে কম রয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বর্তমানে আমদানি করা আদা ১২০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গেল বছরেরর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা। গেল বছরের তুলনায় বর্তমানে আমদানিকৃত আদার দাম কম রয়েছে কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
দাম কমেছে চিনিরও
চিনি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা, গেল বছর দাম ছিলো ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। বছর ব্যবধানে চিনির দাম কমেছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। বর্তমানে ডিম ৩৮ থেকে সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা হালিতে বিক্রি হলেও গেল বছর দাম ছিলো ৫০ থেকে ৫৩ টাকা।
দাম বেড়েছে গুড়া দুধের
বর্তমানে ডানো ১ কেজি গুড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৮৬০ টাকায়, গেল বছর দাম ছিলো ৮০০ থেকে ৮২০ টাকায়; বছর ব্যবধানে কেজি প্রতি দাম কমেছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা। ১ কেজির ডিপ্লোমা ৮৪০ থেকে ৯১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গেল বছরের একই সময়ে দাম ছিলো ৭৯০ থেকে ৮২০ টাকা। ফলে বছর ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৯০ টাকা। ফ্রেশের দামও বেড়েছে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৯০ টাকা। আর মার্কস এর দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ১০০ টাকা।
এর বাইরে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, গেল বছর দাম ছিলো ১৭৫ থেকে ১৯০ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজিতে, গত বছর দাম ছিলো ৫৬০ থেকে ৭০০ টাকা। গরু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে, গেল বছর দাম ছিলো ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। খাসি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২৫০ টাকা কেজিতে, গেল বছরও দাম প্রায় একই ছিলো।
গত এক বছরের সামগ্রিক বাজার চিত্র জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে মায়ের দোয়া স্টোরের কর্মচারি বাবলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত এক বছরে আমদানি করা সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দেশীয়ভাবে উৎপাদন করা বা দেশীয় পণ্যের দাম কমেছে। আমদানি করা পণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল, কফি, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেশতা বাদাম, কিসমিস ও পাউডার দুধের দাম একবছরে আরও বেড়েছে। কমার মধ্যে চিনি ও পোলাও এর চালের দাম কমছে। এর বাইরে সব ধরণের চালের দাম বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর বেচাকেনা কম। তুলনামূলকভাবে বেচাকেনা কমে যাওয়ায় লাভও কমেছে।’
সারাবাংলা কয়েকজন ভোক্তার সঙ্গে কথা বলেছে। রাজধানীর মহাখালীর মাহবুব হাসান সজীব তাদের একজন। বেসরকারি এই কর্মজীবী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত এক বছরে কোন পণ্যের দাম কমেছে বলে তো চোখে পড়ছেনা। তেল ও চালের দাম বেড়েছে। বাচ্চার জন্য গুড়া দুধ লাগে সেটারও দাম বেড়েছে। সাবান, স্নো, পাউডার ও নারিকেল তেলের দাম বেড়েছে। যে পণ্যে হাত দেই সেখানেই দাম বাড়তি দেখি। অথচ আয় সেভাবে বাড়েনি। বাধ্য হয়ে টিসিবির পণ্য কিনি।’
তিনি বলেন, ‘সবজির বাজারও এখন চড়া। শশা ও গাজর তো কেনাই যায়না। সব ধরণের সবজির দাম ৮০ টাকার উপরে। আমরা মধ্যভিত্তরা দাম বৃদ্ধির চাপায় পৃষ্ট হচ্ছি।’
মিরপুরের কালশী এলাকার একটি দোকানে মিথুন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হলে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এখন পেঁয়াজ ও আলুর দাম কিছুটা কম রয়েছে। চিনি, মসুর ডাল ও ছোলার দামও কিছুটা কম। আর বাদ বাকি যে দিকে তাকাবেন সেই পণ্যের দামই বেশি। দাম কমেছে বাজারে এমন পণ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন।’