Wednesday 30 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চায় না বিএনপি

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুলাই ২০২৫ ২২:১৬ | আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ২২:১৮

পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চায় না বিএনপি। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: দীর্ঘদিন ডানপন্থীদের সঙ্গে রাজনীতি করলেও ইদানিং তাদের কর্মকাণ্ডের তীর্যক সমালোচনা করছেন বিএনপি নেতারা। মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা পর্যন্ত এ সমালোচনায় শরিক হচ্ছেন। কিন্তু, এই সমালোচনাকে দ্বন্দ্বে রূপ দিতে চায় না বিএনপি। পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখে রাজনীতির মাঠ স্থিতিশীল রাখতে চায় তারা।

পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি ঘটে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ওই ঘটনার পর ইসলামপন্থী কিছু দল ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল এনসিপির ‘লাগামহীন’ সমালোচনার শিকার হয় বিএনপি। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামী আদাজল খেয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে মাঠে নামে। জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতাদের নেতৃত্বে ঢাকার সড়কে মিছিল হয়, ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, টাকা যায় লন্ডনে’, ‘লন্ডন না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’।

বিজ্ঞাপন

পালটা জবাব দিতে বিএনপিও কম যায়নি। দলটির মধ্যম সারির নেতা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা একের পর এক বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। ওইসব মিছিল থেকে ‘জামায়াত শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘গোলাম আজমের বাচ্চারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘একাত্তরের রাজাকার, এই মহূর্তে বাংলা ছাড়’ স্লোগানে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত করে তোলে।

এমন প্রেক্ষাপটে পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন তৈরি হয়। বিশ্লেষকদের মতে, চাঁদাবাজি, খুন ও দখলের মতো কর্মকাণ্ডকে ঘিরে বিএনপির বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযোগ অব্যাহত রেখেছে ইসলামপন্থী ও এনসিপি, তাতে করে বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন সংকট পড়তে যাচ্ছে! অন্যদিকে বিএনপি ও তারেক রহমানের চরিত্র হননের চেষ্টার পালটা জবাব দিতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা যেভাবে বাগযুদ্ধ শুরু করেছে, তাতে করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামীবিরোধী যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, সেটা নষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে দলীয় সূত্র বলছে, আপাতত সেই সম্ভাবনা আর নেই। বিএনপির হাইকমান্ড থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পালটা-পালটি বক্তব্য এবং সমালোচনার মাধ্যমে পুরোনো মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে ‘শত্রু পক্ষ’কে সুযোগ দেওয়া যাবে না। ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং এনসিপির ব্যাপারে সহনশীল আচরণ করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ জুলাই অসুস্থ জামায়াত আমিরকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০ জুলাই থেকে দুই দলের কাঁদা ছোড়া-ছুড়িও বন্ধ হয়।

অবশ্য ২৬ জুলাই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটা সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ইসলামপন্থীদের মধ্যে ফের ক্ষোভের সূচনা হয়। ডানপন্থীদের উত্থানে শঙ্কা প্রকাশ করায় মির্জা ফখরুলের কঠোর সমালোচনা করেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বিএনপির মহাসচিব ‘দক্ষিণপন্থীদের উত্থান’ সম্পর্কিত এক প্রশ্নে যেভাবে উত্তর দিয়েছেন, তা জনমনে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুল বার্তা দেবে। আমরাও বাংলাদেশে রাজনীতি করছি। আমরা তো এমন কোনো শক্তির উত্থান দেখছি না। তিনি যদি এমন কোনো শক্তির উত্থান দেখেন, তাহলে তা পরিষ্কার করে বলা উচিত। কিন্তু, তা না করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এমন নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করাকে আমরা অশুভকর বলে মনে করছি।’’

সূত্রমতে, মির্জা ফখরুলের ওই বক্তব্য নিয়ে জামায়াত নেতাদের মধ্যেও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ার পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেয়নি বিএনপি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দেন। কিছু বক্তব্য ব্যক্তিগত দর্শন ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। সব বক্তব্য ধরতে নেই। বিএনপির আপাতত পলিসি হচ্ছে ফ্যাসিবাদবিরোধী সবশক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দলগুলোর মধ্যে বিভেদ-বিভাজন কাম্য নয়।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

এনসিপি জামায়াতে ইসলামী জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পুরানো মিত্র বিএনপি সম্পর্ক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর