গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যা চালানোর দাবি উঠে এসেছে ইসরায়েলের দুইটি শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনে। ব’তসেলেম নামের এক সংগঠন জানায়, ইসরায়েলের রাজনীতিবিদ ও সামরিক কমান্ডারদের বিবৃতি পরীক্ষার পর তারা এ গাজায় হামলার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এদিকে, ইসরায়েলেরই আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন ফিজিশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েলও (পিএইচআরআই) একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) গাজায় গণহত্যার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রথম কোনো সংগঠন। ব’তসেলেম এই তথ্য প্রকাশের পরে ফিজিশিয়ান ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েলও (পিএইচআরআই) গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে অভিহিত করে।
যাচাইয়ের ভিত্তিতে সংগঠনগুলো বলছে, ‘গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ইচ্ছাকৃত ও পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।’
এদিকে, সোমবারের হামলায় ৫৫ জন নিহত ও ৮০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৭ জন ত্রাণপ্রত্যাশী। গাজার ৮০ শতাংশের বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
৭৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ব’তসেলেম বলছে, গাজার বাস্তবতাকে ‘হামাসের শাসন ব্যবস্থা বা তার সামরিক সক্ষমতা ভেঙে ফেলার প্রচেষ্টা হিসেবে ন্যায্যতা বা ব্যাখ্যা করা যাবে না।’
সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ইউলি নোভাক বলেন, ‘কোনো কিছুই আপনাকে এ উপলব্ধির ন্যায্যতা দেয় না যে, আপনি গণহত্যাকারী সমাজের অংশ। এটি আমাদের জন্য গভীর বেদনাদায়ক মুহূর্ত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্তব্য যথাসম্ভব স্পষ্টভাবে সত্য বলা–ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। আমাদের গণহত্যার প্রেক্ষাপট রয়েছে।’
সংগঠনটি বলছে, গাজায় ইসরায়েল যেসব অপরাধ করছে, তার মধ্যে আছে– সরাসরি হামলা ও বিপর্যয়কর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে গণহত্যা, ব্যাপক পরিসরে অবকাঠামো ধ্বংস, সামাজিক কাঠামো ধ্বংস, গণগ্রেপ্তার, বন্দি নির্যাতন ও জাতিগত নির্মূলের চেষ্টাসহ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি। এতে আরও বলা হয়, নানা সিদ্ধান্তে ইসরায়েলের শীর্ষ নেতাদের দেওয়া বিবৃতি সংঘাত জুড়ে ‘গণহত্যার ইচ্ছাকেই প্রকাশ করেছে’।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। তাদের দাবি, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই হামলা করছে। এ পর্যন্ত হামলায় গাজায় কমবেশি ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লাখ ৪৪ হাজার ৮৫১ জন। হতাহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েল প্রায়ই নির্বিচারে এসব হামলা চালিয়েছে।