তাসফিয়ার মৃত্যুরহস্য তদন্তে ডিবি, কারাগারে ফিরোজ
৩ জুলাই ২০১৮ ২১:২৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলায় কথিত যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজকে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুই মাসেও তদন্তে কার্যকর অগ্রগতি না হওয়ায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মাহবুবর রহমান পতেঙ্গা থানা থেকে সরিয়ে তদন্তভার ডিবিকে দিয়েছেন।
সোমবার (৩ জুলাই) চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা সেশন জজ ও তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মজিদের আদালতে ফিরোজ আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। এসময় আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জেলা সেশন জজ আদালতের পেশকার কাজল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, পতেঙ্গা থানার একটি হত্যা মামলায় ফিরোজ নামে এক আসামি হাইকোর্টে আত্মসর্মণ করে জামিন চেয়েছিলেন। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে জেলা সেশন জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে ফিরোজ আজ (সোমবার) ভারপ্রাপ্ত সেশন জজের আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে জানান, সিএমপির সর্বশেষ মাসিক সভায় কমিশনার মামলাটি তদন্তের জন্য ডিবিকে নির্দেশ দিয়েছেন। সিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিদর্শক স্বপন কুমার সরকারকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় উপকমিশনারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিমও গঠন করা হয়েছে।
গত ০২ মে সকালে নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির অদূরে ১৮ নম্বর ঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে তাসফিয়া আমিনের (১৬) মরদেহ পায় পুলিশ।
প্রথমে পরিচয় নিশ্চিত না হলেও দুপুরে পরিবারের লোকজন থানায় গিয়ে মরদেহ শনাক্ত করেন।তাসফিয়া কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার ডেইলপাড়া এলাকার মো. আমিনের মেয়ে।চট্টগ্রাম নগরীর ও আর নিজাম রোডে তাদেরবাসা। সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।
পরিবার ও পুলিশের ভাষ্যমতে ১ মে বিকেলে বন্ধু আদনান মির্জার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পর তাসফিয়া আর বাসায় ফেরেনি । মরদেহ উদ্ধারের পর ২ মে রাতেই পুলিশ তাসফিয়ার বন্ধু আদনান মির্জাকে আটক করে।
৩ মে তাসফিয়ার বাবা বাদি হয়ে পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামিরা হলেন, গ্রেফতার হওয়া তাসফিয়ার বন্ধুও এলিমেন্টারি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান মির্জা (১৬), সানশাইন গ্রামার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র শওকত মিরাজ ও আসিফ মিজান,আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির ছাত্র ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম এবং কথিত যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ ও তার সহযোগীসোহায়েল ওরফে সোহেল।
আদনান, শওকত, আসিফ ও ইকরাম নগরীর মুরাদপুর এলাকার ‘রিচ কিডস’ নামে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ফিরোজ তাদের কথিত বড় ভাই।
গ্রেফতারের পর আদনান ও আসিফ মিজান বর্তমানে কারাগারে আছেন।
পরিবারের ভাষ্য- তাসফিয়া নিখোঁজের পর তার বাবা আদনান মির্জাকে বাসায় নিয়ে গিয়েছিল। এ সময় তাদের কথিত বড় ভাই ফিরোজসহ আসামিরা তাদের বাসায় যান। তাসফিয়াকে খুঁজে বের করার কথা বলে আদনানকে নিয়ে আসেন। এতে তাসফিয়ার সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডে আদনানের সঙ্গে ফিরোজসহ আসামিদের যোগসাজশের সন্দেহ করেন তার বাবা।
এদিকে তাসফিয়ার মৃত্যুর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে ভিসেরা রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই