ঢাকা: জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ১২টি বিষয়ে একমত হওয়াকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা আয়োজন করে ‘শফিউল বারী বাবু স্মৃতি পরিষদ’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব খুশি হই যখন পত্রিকায় দেখি একটা পজেটিভ নিউজ। খবরের কাগজে দেখলাম যে, ১২ টা মৌলিক বিষয় পরিবর্তনে সবগুলো দল এক হয়েছে। দিস ইজ এ পজেটিভ স্টেপ এবং আমি ধন্যবাদ জানাই ড. আলী রীয়াজকে। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে অন্তত ওই জায়গায়টায় আসার চেষ্টা করেছেন।‘
তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে অনেকে খোটা দিয়ে কথা বলে যে, আমরা সংস্কার চাই না। সংস্কারের চিন্তাটাই তো আমাদের, সংস্কারের শুরু আমাদের দিয়ে। ১৯৭৫ সালের আগে শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে একদলীয় শাসন বাকশাল করেছিলেন। সেই বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসে মাল্টি পার্টি সিস্টেমের যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সেটা চালু করলেন কে? আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।’
‘‘বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ইত্যাদি সংস্কার শুরু করলেন জিয়াউর রহমান.. এগুলো ছিল তার রাজনৈতিক সংস্কার। আর অর্থনৈতিক সংস্কার কী ছিল? একটা বদ্ধ তথাকথিত ভ্রান্ত অর্থনৈতিক ধারণা থেকে তিনি নিয়ে আসলেন মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণায় এবং সেটা করে তিন-সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের চেহারা বদলে গেল। যে কিসিঞ্জার বলেছিলেন যে, বাংলাদেশকে বটমলেস বাসকেট সেই আমেরিকার বলল যে, বাংলাদেশ এখন একটা সম্ভাবনাময় দেশ’’- বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভার্মেন্টকে পার্লামেন্টারি ফর্ম অব গভার্মেন্টে নিয়ে গেলেন। ৯ বছর লড়াই করেছেন রাস্তায় স্বৈরাচার দূর করার জন্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রথমে তিনি (খালেদা জিয়া) কেয়ারটেকার সরকার মানেননি। পরে যখন দেখলেন, এটা মানলে দেশের মানুষের উপকার হবে, গণতন্ত্র একটা শক্তিশালী পথ পাবে, ভিত্তি পাবে, তখন তিনি সেটা মেনে নিয়ে কেয়ারটেকার গভার্মেন্টকে সংবিধানে সন্নিবেশিত করলেন সংসদের মাধ্যমে। যার ফলে ওই সরকারের অধীনে তিনটা নির্বাচন হয়েছে যে নির্বাচনগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি, মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। সুতরাং সংস্কার তো বিএনপির। সংস্কারকে আমরা ভয় পাই নাই, আমরা সংস্কারকে স্বাগত জানাই।’
তিনি বলেন, ‘‘সমস্যাটা ওই জায়গায় হয়, যখন দেখি যে, নতুন নতুন চিন্তা আসছে। সেই চিন্তার সঙ্গে আমাদের দেশ-জাতি পরিচিত নয়। এ ব্যাপারে আমি কমেন্ট করব না। একটা কমেন্ট করতে চাই, এই যে পিআর বা আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচন, এটা (পিআর) আমাদের দেশের মানুষ বোঝেই না। তারা বলে পিআর কী জিনিস ভাই? যারা এখনো ইভিএমে ভোট দেওয়া বোঝে না.. যার ফলে ইভিএমে ভোট দেয় না, তারা পিআর বুঝবে কী করে? এই চিন্তাভাবনা থেকে দূরে সরে যেতে হবে। দুঃখজনক হলো যে, এটাকে আমাদের দেশের দুই-একটা রাজনৈতিক দল প্রোমোট করে। প্রোমোট না পণ করে বসে আছে যে, এটা না হলে নির্বাচনে যাব না। এখন কী বলব বলেন?”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ দেশের মানুষ যেটাতে অভ্যস্ত সেই ভোটের ব্যবস্থা করেন, জনগণের প্রতিনিধি থাকে সেই পার্লামেন্টের নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, তাহলেই সমস্যাগুলো সমাধান হবে। না হলে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে এসে নতুন নতুন চিন্তাভাবনা দিয়ে কিন্তু দেশের সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, অবিলম্বে সংস্কারগুলো শেষ করুন, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন আর দয়া করে নির্বাচনের যে তারিখটা নির্ধারণ করেছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠকে বসে, যেটাকে জাতি অনুপ্রাণিত হয়েছে, আশান্বিত হয়েছে সেই সময়টাতে নির্বাচন দিন, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন।’
শিশু একাডেমি সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে খুব কষ্ট পাই যখন শুনি শহিদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত শিশু একাডেমিকে তার এখনকার যে জায়গায় ভবন আছে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। আমি বিবৃতি দিয়েছি, আমি আজকে এই আলোচনা সভা থেকে আবার অনুরোধ করব, আমি শুনেছি এটা নাকি হাইকোর্টের জায়গা। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর সকলের মতামত নিয়ে আমাদের শিশুদের বিকশিত করবার জন্য এই শিশু একাডেমি স্থাপন করেছিলেন। এখন সারা বাংলাদেশে শিশু একাডেমির শাখা আছে।’
প্রয়াত শফিউল বারী বাবু স্মৃতি পরিষদের সভাপতি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, তাহসিনা রুশদীর লুনা, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশারফ হোসেন, মীর সরাফত আলী সপু, হেলেন জেরিন খান, হারুনুর রশীদ, আমীরুল ইসলাম খান আলীম, এসএম জিলানি, মোস্তাফিজুর রহমান, হাবিবুর রশিদ হাবিব, সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও প্রয়াত শফিউল বারী বাবুর বড় ভাই সাইয়িদুল বারী মির্জা প্রমুখ।