ঢাকা: জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে মরণাস্ত্র ব্যবহারসহ হেলিকপ্টার থেকে গুলি-ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে লেথাল উইপেন বা মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব ও ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সাবেক এই পুলিশপ্রধানের জবানবন্দির নথিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে জানায় আদালতের একটি সূত্র। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) জানা গেছে এসব তথ্য।
এর আগে, ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন সাবেক এই আইজিপি। সেদিন ট্রাইব্যুনালে মামুন বলেন, ‘আই প্লিড গিল্টি বা আমি দোষ স্বীকার করছি। আমি স্বেচ্ছায় সত্য প্রকাশ করবো। এ মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত আমার জানা সব পরিস্থিতির কথা তুলে ধরবো।’
ওই দিন মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
এছাড়া মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ৩ আগস্ট ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়। একইসঙ্গে নিরাপত্তার জন্য মামুনকে কারাগারে আলাদা কক্ষে রাখার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, ৭ জুলাই এ বিষয়ের ওপর স্টেট ডিফেন্সের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকের দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১ জুলাই এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। ওই দিন আদালতে প্রসিকিশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তবে সময় চেয়ে আবেদন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
গত ১৬ জুন এ মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।
গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই শেষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জমা দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।