রংপুর: উত্তরবঙ্গের দীর্ঘদিনের বাজেটবৈষম্য নিরসন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তরবঙ্গের জনগণ ক্রমাগত বাজেটবৈষম্য, অবকাঠামোগত পশ্চাদপদতা ও শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও শিল্পায়নে অনগ্রসরতার শিকার হয়ে আসছে।
এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের পক্ষ থেকে দুই দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো- উত্তরবঙ্গের অনন্তকালের বাজেটবৈষম্য নিরসন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে একটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক উন্নয়ন কমিশন গঠন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বায়ত্তশাসিত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করা।
স্মারকলিপিতে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে উল্লিখিত দাবির বিষয়ে কার্যকর ঘোষণা ও পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে উত্তরবঙ্গ ব্লকেড এবং উত্তরবঙ্গ থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। একইসঙ্গে, যদি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই দফা দাবি আদায়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষা কার্যক্রম, বিশেষ করে ক্লাস ও পরীক্ষা, বর্জনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হবেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে, দুই দফা দাবি পূরণে সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি পার্কের মোড় হয়ে রংপুরের ৮ জেলার প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে দুই পাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করেন মডার্ন মোড়। ‘লাশ লাগলে লাশ নে, উত্তরবঙ্গে বাজেট দে’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় এলাকা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১২টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। অনুমোদিত ১২টি প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি নতুন, চারটি সংশোধিত এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির দুইটি প্রকল্প রয়েছে। রংপুরের জন্য কোনো প্রকল্প নেই। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১০০০ হাজার কোটি টাকার উপরে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে, তা আসেনি একনেকে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ প্রথম জীবন দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে এই সরকারকে। প্রধান উপদেষ্টাসহ ৫-৬ জন উপদেষ্টা বেরোবি ও রংপুরের উন্নয়নে আশ্বাস দিয়েছেন। অথচ গতকালও ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকার প্রকল্প পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাবির অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।’’
তিনি বলেন, ‘চলমান বাজেটে রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য বাজেট শূন্য যা একটা স্বাধীন দেশে কল্পনাও করা যায় না। পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেও এতো বৈষম্য ছিল না। কিন্তু অন্যান্য বিভাগের চেয়ে বাজেট বরাদ্দ কম সবসমই রংপুর বিভাগে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হারও বেশি এ অঞ্চলে এসব কারণে। অথচ ইতিহাস বলে ব্রিটিশ আমল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সকল বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রংপুর এগিয়ে, সব বিপ্লবীদের মধ্যে প্রথম শহিদ এখান থেকেই।’ এরপরও কী বৈষম্য থেকেই যাবে বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।