ঢাকা: মূল্যস্ফীতির চাপ, নিম্ন প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগে মন্থরগতির প্রেক্ষাপটে চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির ভারসাম্য রাখতে প্রতিবছর ছয় মাস মেয়াদি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণে রূপরেখা তুলে ধরা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এবারের মুদ্রানীতিতে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নিয়মরক্ষার মুদ্রানীতি ঘোষণা করছে। মূল লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এতে নীতি সুদহার ও বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের হার আগের মতোই অপরিবর্তিত থাকবে। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা কম।
ইতোপূর্বে মুদ্রানীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দেশের অর্থনীতি এখনও উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক খাতের চাপ এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতার মতো বড় কিছু সামষ্টিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মূল লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে সহায়তা করা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কন্ট্রাকশনারি মনিটারি পলিসি’ (সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি) গ্রহণের পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেখা গেছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এই ইতিবাচক প্রবণতা ধরে রাখতে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধজুড়েই কঠোর মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মুদ্রানীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাহিদা ও সরবরাহ উভয় দিক সামাল দিতে কেবল মুদ্রানীতি নয়, সহায়ক রাজস্বনীতিরও প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬.৪ শতাংশে— যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯.৮ শতাংশ। এ পরিস্থিতিতে ঋণপ্রবাহে আগের ধারা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে। তবে ২০২৫–২৬ অর্থবছরে তা বাড়বে ৪.৯ শতাংশ এবং ২০২৬–২৭ অর্থবছরে পৌঁছাবে ৫.৭ শতাংশে।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ, যা মে মাসে ছিল ৯.০৫ শতাংশ।