ঢাকা: ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করা হচ্ছে চার দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব— ‘৩৬ জুলাই কালচারাল ফেস্ট: জুলাই জাগরণ’। সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে ১ থেকে ৪ আগস্ট প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে এই বর্ণাঢ্য আয়োজন।
বুধবার (৩০ জুলাই) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর বর্তমান পরিচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০২৪ সালের আন্দোলনে সাইমুম শুধু সাংস্কৃতিক দল ছিল না, ছিল প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। মাঠে থেকেছি, গ্রাফিতিতে থেকেছি, জীবনও দিয়েছি। রংপুরে আমাদের সহ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল তাহির শহিদ হয়েছেন—এটা আমাদের গর্ব, আবার ব্যথাও।’
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক কমিটির পরিচালক আবু মুসা বলেন, ‘এ উৎসব শুধুই আয়োজন নয়—এটা ইতিহাসের দলিল, প্রতিবাদের স্মারক ও শিক্ষা। সাংস্কৃতিক চেতনায় আমরা নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে চাই, সংস্কৃতি হতে পারে একটি জাতির প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার।’
আয়োজকরা জানান, প্রতিদিন উৎসব চলবে তিনটি পৃথক অধিবেশনে। প্রথম অধিবেশন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলবে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। যেখানে চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে ফিরে দেখা হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান।
পরের অধিবেশন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। যেখানে থাকবে শহিদ পরিবার, আহত আন্দোলনকারী ও বিশিষ্টজনদের স্মৃতিচারণ ও আলোচনাসভা।
সবশেষ অধিবেশন সন্ধ্যায় শুরু হয়ে সংগীত, নাটক, আবৃত্তি ও অন্যান্য শিল্পকর্ম উপস্থাপনার মাধ্যমে রাত ১০টায় শেষ হবে।
‘জুলাই জাগরণ’-এর বিশেষ আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
আয়নাঘর: একটি ভাবনানির্ভর প্রদর্শনী, যেখানে আয়নার মাধ্যমে দর্শকরা অনুভব করতে পারবেন প্রতিবাদের বহুমাত্রিক রূপ।
শহিদ মানচিত্র: বাংলাদেশের আটটি বিভাগের প্রতীকী চিত্রায়নে ফুটে উঠবে আন্দোলনের স্মরণীয় মুহূর্ত।
গ্রাফিতি প্রদর্শনী: আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঁকা দেয়ালচিত্রের সংগ্রহ।
কিডস জোন: ছোটদের জন্য চিত্রাঙ্কন, গল্পপাঠ, মিনি থিয়েটার ও খেলার আয়োজন।
স্মারক ও বইয়ের স্টল: আন্দোলনভিত্তিক প্রকাশনা ও স্মারক সংগ্রহের সুযোগ থাকবে এখানে।
উৎসবে উপস্থিত থাকবেন সরকারি উপদেষ্টা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনীতিবিদ, নাট্যজন, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও তরুণ প্রতিনিধিরা। বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহত আন্দোলনকারীদের।
আয়োজকরা বলেন, ‘‘জুলাই জাগরণ’ হবে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের এক অভিন্ন মঞ্চ। একইসঙ্গে এটি হবে সম্মান, স্মরণ ও শিক্ষাভিত্তিক এক গর্বিত আয়োজন, যা জাতিকে তার অতীত সংগ্রামের সঙ্গে নতুনভাবে সংযুক্ত করবে।’