ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পটি সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে বড় একাডেমিক উদ্যোগ। এই প্রকল্পটি জনগণের করের টাকায় বাস্তবায়িত হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একে জাতির পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপহার হিসেবে বিবেচনা করছি। জাতির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এই অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বুধবার (৩০ জুলাই) অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য এসব কথা বলেন। প্রায় ২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পটির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রকল্পের সারসংক্ষেপ এবং অ্যানিমেশন চিত্র উপস্থাপন করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ, হিসাব পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ জাবেদ আলম মৃধা।
সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য আরও বলেন, ‘এই প্রকল্প মূলত একাডেমিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় যে ভবনগুলো নির্মিত হবে, তার প্রায় সবকটিই শিক্ষাদান ও গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি ব্রিটিশ মডেল অনুসরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কার্যক্রমও এই প্রকল্পের মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে।’
উপাচার্য জানান, এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত গবেষণাকেন্দ্র, ল্যাব এবং অন্যান্য ফ্যাসিলিটি সমাজের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় থাকলেও অনুমতির ভিত্তিতে বাইরের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকরা ব্যবহার করতে পারবেন। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে সবুজায়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বৃদ্ধির বিষয়েও প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা পরামর্শ দিয়ে এ ব্যাপারে সহায়তা করবেন।‘
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শিক্ষা উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা, অর্থ বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এটিকে একটি মাস্টারপ্ল্যানের সূচনা হিসেবে দেখছি। আশা করি, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘আজকের এই সংবাদ সম্মেলন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যও বটে। এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পটি আমাদের বহুদিনের চাহিদা ছিল এবং এটি এখন বাস্তবায়নের পথে।’
তিনি বলেন, ‘অবকাঠামো যেমন প্রয়োজন তেমনি গবেষণার জন্যও টেকসই অর্থায়ন অত্যন্ত জরুরি। আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যাতে সাবলীলভাবে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন সে জন্য আরও সহায়তা প্রয়োজন।’ এই ক্ষেত্রে তিনি অ্যালমনাইদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এ সময় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ক্যাম্পাসের ওপেন স্পেস বা উন্মুক্ত জায়গা হ্রাস পাবে না বরং গ্রিণ স্পেস প্রায় ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এটি পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত একটি প্রকল্প।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নের পুরো সময়জুড়ে দায়িত্বে নাও থাকতে পারি। কিন্তু এ টাকাগুলো যেন অপচয় না হয়, সে জন্য সাংবাদিক সমাজকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। আপনারা চোখ-কান খোলা রাখবেন। যেটা করা দরকার, সেটাই করবেন।’
সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘আপনারা প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকবেন। গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে অব্যাহত নজরদারি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।’
কোষাধ্যক্ষ আরও জানান, প্রতি ছয় মাস পরপর আমার দফতর থেকে এই প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের উদ্দেশে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হবে।
উল্লেখ্য, পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ জুলাই ২০২৫ থেকে শুরু করে জুন ২০৩০ এর মধ্যে শেষ হবে।
এই প্রকল্পের অধীনে থাকছে- ৬টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ২৬০০ জন ছাত্রীর জন্য ৪টি আবাসিক হল নির্মাণ, ৫১০০ জন ছাত্রের জন্য ৫টি আবাসিক হল নির্মাণ, ৫টি ছাত্র হলের জন্য এবং ৪টি ছাত্রী হলের জন্য হাউজ টিউটর আবাসন সুবিধা তৈরি, শিক্ষক ও অফিসারদের জন্য ২টি আবাসিক ভবন নির্মাণ, ৫টি অন্যান্য ভবন (প্রশাসনিক ভবনসহ) নির্মাণ, ৪টি জলাধার সংস্কার এবং সৌন্দর্যবর্ধন, বিদ্যমান সার্ভিস লাইন মেরামত/সংস্কার, খেলার মাঠ উন্নয়ন ১টি, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ২টি এবং ড্রেনেজ সিস্টেম ও ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট (ওয়েস্টবিন-২৫৬টি) করা হবে।