চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের রাউজানে দুই গ্রুপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা। অন্যদিকে বিএনপির সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা রাউজানে মিছিল-সমাবেশ করেছেন।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দলটির রাউজান উপজেলা ও পৌরসভা কমিটির উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে রাউজান পৌরসভার ছত্তারহাট এলাকায় গোলাম আকবর খোন্দকার এবং গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গোলাম আকবর খোন্দকারসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। ভাঙচুরের পাশাপাশি কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়।
এদিন বিকেলে রাউজান পৌরসভা সদরের সুলতানপুরে গোলাম আকবর খোন্দকার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও রাউজান উপজেলার সাবেক সভাপতি প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের কবর জিয়ারতের জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। একই সময়ে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা পৌর সদরে মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা বের করে। পৌরসভার ছত্তারহাট এলাকায় উভয় গ্রুপ মুখোমুখি হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী সমর্থিত আজিজুল হক, সাবের সুলতান কাজল, মোহাম্মদ রিয়াজ, শাজাহান সাহিল, লিটন মহাজন, শাহাদত মির্জা, ইউসুফ তালুকদার, মোহাম্মদ সোহেল, মোহাম্মদ একরাম, রাসেল খান, মোহাম্মদ শহিদসহ ৭০-৮০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটায়।
রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এটা পূর্বপরিকল্পিত হামলা ছিল। গোলাম আকবর খোন্দকারকে যারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তারাই উনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, জনপ্রিয় নেতা গোলাম আকবর খোন্দকারকে তারা সহ্য করতে পারে না। উনি রাউজানে গেলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। উনার জনপ্রিয়তায় তারা শঙ্কিত। এজন্য গোলাম আকবর খোন্দকারকে তারা যেকোনোভাবে প্রতিহত করতে চাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন, গতকাল উনাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। গুলিটা যদি উনার কাঁধের আর এক ইঞ্চি কিংবা আধা ইঞ্চি কাছ দিয়ে যেত, তাহলে উনি স্পটেই মারা যেতেন।’

রাউজান উপজেলা ও পৌর কমিটির উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
প্রশাসনের নিরাপত্তার আশ্বাসের পরও হামলার শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত আমাদের প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন আহমদের কবর জিয়ারতের জন্য যাচ্ছিলাম। আমাদের আর কোনো কর্মসূচি ছিল না। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলাম না, সেজন্য আমাদের কোনো প্রস্তুতিও ছিল না, কারণ আমরা তো কোনো যুদ্ধে যাচ্ছিলাম না। কিন্তু সেখানে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থিত কিছু সন্ত্রাসী।’
‘তবে রাউজানে গেলে কিছু ঝামেলা হতে পারে, এটা আমরা শুনেছিলাম। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। প্রশাসন বলেছিল, এ ধরনের কোনো ঝামেলা হলে তারা সেটা মোকাবিলা করবে, তারা সেটা ব্যর্থ করবে। আমাদের বলেছিল, আপনারা আসতে পারেন। প্রশাসন আশ্বস্ত করেছিল, সেজন্য আমরা গিয়েছিলাম।’
হামলাকারীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এরা বিএনপির নাম ব্যবহার করলেও বিএনপির রাজনীতিতে তারা বিশ্বাস করে না। এরা সন্ত্রাসী। এরা যাদের প্রতিপক্ষ মনে করে তাদের ওপর হামলা করে। আমরা হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবি জানাচ্ছি, তাদের বিচার চাই। আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে যিনি নিজেকে দাবি করেন, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, উনার দলীয় সব পদ কেন্দ্র থেকে স্থগিত করা হয়েছে। আমরা চাই, তার বিচার হোক।’
এ ঘটনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জসিম উদ্দিন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পৌরসভা কমিটির সভাপতি আবু মোহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গোলাম আকবর খোন্দকার এবং গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী উভয়ের বাড়ি রাউজান উপজেলায়। উভয়ে রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য। রাউজানে বিএনপির নেতাকর্মীরা এ দুই নেতার আলাদা বলয়ে বিভক্ত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রাউজানে উভয়গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে গণমাধ্যমের ভাষ্য।
সর্বশেষ সংঘাতের পর কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ওই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন গোলাম আকবর খোন্দকার। আর কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পুরো রাউজান উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরের মুন্সিঘাটা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে থানায় যায়নি বলে জানিয়েছেন রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া।