ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ে মোট ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এ তথ্য পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব
৩০টি দলের সম্মতিতে বাংলাদেশে একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। যেখানে থাকবে জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) ও সিনেট (উচ্চকক্ষ)। দুই কক্ষেই বিরোধী দলের সদস্যদের থেকে ডেপুটি স্পিকার মনোনয়ন এবং রাষ্ট্রপতির অভিশংসন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সম্পন্ন করার বিধানও প্রস্তাবিত।
নারী আসন ও ভাষাগত স্বীকৃতি
১৯টি দল জাতীয় সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবে একমত হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬(২) প্রতিস্থাপন করে নাগরিক পরিচয় ‘বাংলাদেশি’ করা এবং সব মাতৃভাষাকে প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবে ৩১টি দল সম্মত হয়েছে।
সংবিধানে বহুজাতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার প্রতিফলন
সংবিধানে বাংলাদেশকে একটি বহুজাতি, বহুধর্মী, বহুভাষী ও বহু সংস্কৃতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক চুক্তির ক্ষেত্রে সংসদের অনুমোদন এবং সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়েও ঐকমত্য গঠিত হয়েছে।
এ ছাড়াও দলগুলো একমত হয়েছে—
বিচার বিভাগ সংস্কার
- আপিল বিভাগে বিচারক সংখ্যা বৃদ্ধি।
- প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে স্বাধীন বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কমিশন (JAC) গঠন।
- সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা।
- বিচারকদের আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রকাশ।
- বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শনকে অসদাচরণ হিসেবে শাস্তিযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার বিধান।
নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার
- রাজনৈতিক দলগুলোকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনার প্রস্তাব।
- স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধান।
- সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের আধিপত্যে আনার প্রস্তাব।
জনপ্রশাসন সংস্কার
৩২টি দল একমত হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানকালে গণহত্যা ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের প্রয়োজন রয়েছে।
- স্বাধীন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন।
- তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ সংশোধনের সুপারিশ।
- কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের প্রস্তাব।
- স্বতন্ত্র ভূমি আদালত স্থাপন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সংস্কার
- দুদক কমিশনার সংখ্যা ৫ জনে উন্নীত।
- মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৪ বছর।
- কমিশনার নিয়োগে ৭ সদস্যবিশিষ্ট বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি।
- সংবিধান সংশোধন করে দুদকের সাংবিধানিক ক্ষমতা নির্ধারণ।
- ৩২ (ক) ধারা বাতিল করে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে আর সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন না রাখার প্রস্তাব।
- ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপে (OGP) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘোষণা।
জাতীয় কৌশল ও স্বচ্ছতা
দলগুলো জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়নের পাশাপাশি অবৈধ উৎসবিহীন আয়ের বৈধতা দেওয়ার চর্চা চিরতরে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়েছে।