Friday 01 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি শক্তিশালী হতে পারে না’

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
৩১ জুলাই ২০২৫ ২১:১৪

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিজেদের পররাষ্ট্রনীতিকে সময়োপযোগী করে তুলতে না পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের অবস্থান দুর্বল থাকবে। আর পররাষ্ট্রনীতিকে কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে হলে আগে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সহমত গড়ে তুলতে হবে। একটি সুসংহত জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি শক্তিশালী হতে পারে না।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান সেমিনার সঞ্চালনা করেন

বিজ্ঞাপন

হুমায়ুন কবির বলেন, পররাষ্ট্রনীতি কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। এর মূল নির্দেশনা আসে সরকার প্রধানের কাছ থেকে। কিন্তু যদি দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক মতভেদ ও দ্বন্দ্ব থেকে যায়, তাহলে সেই নির্দেশনাও দুর্বল হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের ঐক্য ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি নতুন জাতীয় আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু আমরা সেই আত্মবিশ্বাসকে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরতে পারছি না, কারণ অভ্যন্তরীণভাবে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করতে পারিনি।

হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশের কূটনীতির সবচেয়ে জটিল ক্ষেত্র হলো ঢাকা। রাজধানী যদি অস্থিতিশীল থাকে, রাজনৈতিক নির্দেশনায় যদি দ্বিধা থাকে, তাহলে বিদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকদের পক্ষে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব।

তিনি বলেন, আমরা দলীয় স্বার্থে বাইরের শক্তিকে ব্যবহার করার ঝুঁকিপূর্ণ প্রবণতা দেখছি, যা রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে দুর্বল করে দেয় এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করে তোলে। যতদিন এই প্রবণতা চলবে, ততদিন পররাষ্ট্রনীতি শক্তি পাবে না।

হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ গত ৫৪ বছরে মাত্র দু’বার (১৯৮২ ও ১৯৯৫ সালে) পররাষ্ট্র নীতি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ বিশ্বে বহু দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন নিয়মিত তাদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতির রিভিউ করে থাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও এখন যেহেতু নানা ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম চলছে, তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনা উচিত।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির বলেন, ভারত আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। ভৌগোলিক বাস্তবতায় আমাদের সম্পর্ক রাখতেই হবে। কিন্তু এই সম্পর্ক কী কাঠামোর ভিত্তিতে হবে, সে ব্যাপারে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহমত প্রয়োজন।

নেপালের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, নেপাল যখন শান্তি প্রক্রিয়ায় ফিরেছিল এবং মাওবাদীদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, তখন সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিল, নিজেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে হবে। এ আত্মনির্ভরতা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। বর্তমান বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য একটি স্পষ্ট ও কার্যকর কৌশল প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আজকের বিশ্বে বোঝা কঠিন- কে বন্ধু আর কে শত্রু। বাইপোলার বিশ্বব্যবস্থার দিকে আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে।

হুমায়ুন কবির বলেন, বাংলাদেশ মানুষের দেশ। পররাষ্ট্রনীতি হতে হবে মানুষের সম্মান, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিতে। পররাষ্ট্রনীতি অর্ধেক নিজের, অর্ধেক বিশ্বের। তাই আমাদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও শক্তিই হতে পারে একটি কার্যকর পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি।

মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ফ্যাসিজম একটি ইকোসিস্টেম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরাতে হবে। শুধু আমলা দিয়ে হবে না, ফরেন পলিসিতে প্রাইভেট সেক্টরকে যুক্ত করতে হবে। ক্লাইমেট ডিপ্লোম্যাসি, সাইবার নিরাপত্তা, পানি ও সামুদ্রিক সম্পদ-এসব খাতে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। দূতাবাসগুলোকে প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় আরও সক্রিয় করতে হবে।

মেজর এমডি এমাদুল ইসলাম (অব.) বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক করিডোর বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের এক বিপর্যয় ডেকে আনবে। কোনো ধরনের সার্ভে ছাড়া এই করিডরে সমর্থন দিলে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ। কারণ পশ্চিম, ভারত ও চীনের মতো বৃহৎ শক্তিগুলো রাখাইনে সরাসরি জড়িত। কেউই তার নিজের অধিকার ছাড়বে না।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রে বিকল্প ভাবিনি। বিশেষ করে পানি ও ভিসা ইস্যুতে বিকল্প ভাবনার অভাব আছে।

সারাবাংলা/একে/আরএস

পররাষ্ট্র নীতি সেমিনার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর