Sunday 05 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাইয়ের দিনলিপি
‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’-এ পুলিশি বাধা, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ ঘোষণা

ফারহানা নীলা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ আগস্ট ২০২৫ ০৮:০২ | আপডেট: ১ আগস্ট ২০২৫ ০৯:১৬

জুলাইয়ের দিনলিপি। ১ আগস্ট ২০২৫। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ১ আগস্ট ২০২৪। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, আগস্ট মাস চলছে…’— রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে দেয়ালে বড় করে লেখা আছে এখনো। ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। শিক্ষার্থীদের ভাষায় এটি ছিল- ‘জুলাই গণহত্যা’। এরই ধারাবাহিকতায় আগস্টের প্রথম দিনকে তারা বলে ‘৩২ জুলাই’। এটি ছিল প্রতীকী প্রতিবাদ, একটানা গণআন্দোলনের সাক্ষ্য।

রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ

১ আগস্ট (৩২ জুলাই) দেশজুড়ে পালিত হয় ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ দিবস। এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শহিদ, আহত, নির্যাতিত ও গ্রেফতারদের স্মরণ করে নানা আয়োজনে অংশ নেয়। আয়োজনের মধ্যে ছিল- চিত্রাঙ্কন, দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি, ফেস্টুন, আলোচনাসভা ও মিছিল। রাজধানীর পাশাপাশি রাজশাহী, সিলেট, কুষ্টিয়া, বরিশাল, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে একযোগে চলে কর্মসূচি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়ালে আঁকা হয় আবু সাঈদের মুখ। নিচে লেখা— ‘তোমার রক্তের ঋণ শোধ না হওয়া পর্যন্ত আগস্ট থামবে না।’

বিজ্ঞাপন

শুধু ছাত্র নয়, একাত্ম সর্বস্তরের মানুষ

এই আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষকরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নীরব নয়, সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’ অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত মিছিলে অংশ নেন আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী ও সাধারণ মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মশিউর বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন এখন মানুষের আন্দোলন। শুধু চাকরির কোটা নয়, বিচার, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্রের আন্দোলন।’

৬ সমন্বয়কের মুক্তি

‘৩২ জুলাই’ দুপুরে রাজধানীতে নতুন করে আলোচনায় আসে আন্দোলনের ছয় শীর্ষ সমন্বয়কের মুক্তির খবর। দু’দিন পর এই ছাত্রনেতারা দুপুর দেড়টার দিকে মুক্তি পান। ডিবি হেফাজতে থেকেও এই ছয় সমন্বয়ক নীরব প্রতিবাদ জানিয়ে গেছে। নাহিদ ইসলামের বাবা বলেন, ‘ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়ার পর থেকেই কোনো যোগাযোগ ছিল না। টানা দু’দিন কিছু না খেয়ে ছেলেরা শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েছে।’ তবে আন্দোলন থামছে না বলে জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের মুখপাত্ররা। তারা জানায়, ‘এখন আরও বেশি ঐক্য দরকার।’

ডিবি থেকে ফিরেই সারজিস ঘোষণা— লড়াই চলবে

ডিবি থেকে রাতে ছাড়া পাওয়া অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ছয়দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ছয়জনকে আটকে রাখা যায়। কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত, সেগুলো কীভাবে নিবৃত্ত করবেন?’

সারজিস যুক্ত করেন, ‘পরিশেষে এটুকু বলতে চাই, এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনো কিছু মোকাবিলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে, ততদিন এ লড়াই চলবে।’

ঢাবিতে নীলদলের সংবাদ সম্মেলন

দেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল। লিখিত বক্তব্যে তারা শিক্ষার্থীদের দাবির কাঙ্ক্ষিত সমাধান হওয়ায় তাদের আন্দোলনের পথ পরিহারের আহ্বান জানান।

জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা

এদিন বিকেলে সরকার নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে। ঠিক একই সময়ে আন্দোলনকারীরা ২ আগস্ট (৩৩ জুলাই) ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, ‘শহিদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জা, মসজিদে প্রার্থনা এবং দেশব্যাপী মিছিল হবে।’

রেমিট্যান্স না পাঠানোর ঘোষণা প্রবাসীদের

জুলাই গণহত্যা ও চলমান দমনপীড়নের প্রতিবাদে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সামনে বিক্ষোভ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাদের দাবি, হত্যার বিচার ও আন্তর্জাতিক তদন্ত। তারা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি করেন। একইসঙ্গে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স না পাঠানোর আহ্বান জানান। কেউ কেউ প্ল্যাকার্ডে লেখেন— ‘No Remittance Until Justice.’

সহিংসতা তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তার আশ্বাস

জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার চাইলে সহিংসতার তদন্তে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

আস্থা না ফেরায় ক্ষোভ চলতে থাকে…

২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দিলেও আন্দোলন থামেনি। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য- ‘জুলাই শুধু একটি মাস নয়, এটি একটি রক্তাক্ত কালপঞ্জি। আমরা সেই ইতিহাসকে জীবন্ত রাখতে ৩২, ৩৩, এমনকি ৪০ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

ফারহানা নীলা - আরো পড়ুন