চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা নাহিদ ইসলাম ও সারজিস আলমের পর এবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় গেলেন বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা। তারাও কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত শাহ আহমদ শফী ও প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরীর কবর জিয়ারত এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ হাটহাজারী মাদরাসায় যান। এ সময় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
কবর জিয়ারত ও মতবিনিময় শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা পাইনি। পেলে তারপর আমরা মতামত জানাবো।’
জুলাই সনদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছিল। জুলাই সনদের যেসব সুপারিশ ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবাই গ্রহণ করেছে, সেগুলো উল্লেখ করে সনদ চূড়ান্ত হবে। এ সনদে যেসব সুপারিশ থাকবে সেগুলো দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবেন বলে সব রাজনৈতিক দল প্রতিশ্রতি দিয়েছে। ঐকমত্য কমিশন এ ব্যাপারে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি চেয়েছিল। আমরা সেটা করেছি। এটা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান, আইন ও বিধিবিধানের যেসব সংশোধনী প্রয়োজন হবে, সেগুলো আমরা করবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের ৮২৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ৫১টি বাদে বাকি সবগুলোতে বিএনপি একমত হয়েছে। ১১৫টি প্রস্তাবে ভিন্নমত দিয়েছে।
এদিকে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না-ও হতে পারে, এমন কোনো দুশ্চিন্তায় বিএনপি নেই।
হাটহাজারী মাদরাসায় যাবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা যুক্ত ছিলেন, আমরা তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে যে মর্মান্তিক ঘটনা, যে হত্যাযজ্ঞ, তার শিকার যারা, হেফাজতে ইসলাম, তার মূল নেতৃত্ব এখানেই। যারা মূল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, মওলানা আহমদ শফী সাহেব এবং মওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব, তাদের কবর জিয়ারত করে আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছি। এখন যারা দায়িত্বশীল আছেন এই মাদরাসার, তাদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তাদের যে অবদান সেটা আমরা স্বীকার করি।’
‘আপনারা জানেন, বিএনপির নেতৃত্বেই বিগত ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলগুলো আন্দোলন চালিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি শহিদ, সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার, সবচেয়ে বেশি মামলা-হামলার শিকার হয়েছে বিএনপি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি এ লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে গেছে।’
বারবার বিএনপি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিএনপি নেতৃত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য শহিদ জিয়া বিএনপি গঠন করেছিলেন। বারবার এই শূন্যতা তৈরি করা হচ্ছে এবং বারবার বিএনপিকেই এই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। বাকশালের পরেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে বিএনপির হাত ধরে। এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের পরেও দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে বিএনপির হাত ধরে। এবারো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি সবার মতামত নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চায়। আমরা আজ মুরব্বিদের (হেফাজত নেতা) বললাম, শহিদ জিয়া সবাইকে নিয়ে কাজ করতেন। বেগম খালেদা জিয়াও সবাইকে নিয়ে কাজ করতেন, একা না, জোটবদ্ধভাবে। আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আল্লাহতালা যদি আমাদের দেন, তাহলে আমাদেরও সবার পরামর্শের প্রয়োজন হবে, সবার সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।’
‘হাটহাজারী মাদরাসায় যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের বলেছি, আমরা আপনাদের দোয়া চাই, পরামর্শ চাই, সহযোগিতা চাই। হাজারো শহিদ, লাখো নিপীড়িত মানুষ, ২০১৩ সালে হেফাজতের যারা শহিদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাদের আকাঙ্ক্ষা যেন আমরা পূরণ করতে পারি। আর জনগণ যদি অন্য কাউকে তাদের কল্যাণের দায়িত্ব দেয়, সেখানে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৬ বছরের লড়াই এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের দাবির একটা অংশ পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। কিন্তু আরেকটি যেটা মূল দাবি ছিল, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সেটা এখনো অসম্পূর্ণ আছে। কারণ, এখন রাষ্ট্রের কিছু সংস্কারের জন্য কাজ চলছে, একটা ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। সেখানে আমাদের দলের প্রতিনিধি হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমেদ কাজ করছেন। সেটাও চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। জুলাই সনদের যে ড্রাফট, সেখানে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি। আশা করছি, শিগগিরই সেটা প্রকাশ হবে।’
‘ফলে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো বাধা আছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা আশা করি, নির্বাচনের বিষয়ে শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে একটি দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।’
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যদি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, একটি গণতান্ত্রিক সরকার যদি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে এত শহিদ, এত নিপীড়িত মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সেজন্য আমরা আশা করি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমটা দ্রুততর হবে। নির্বাচন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সবকিছুই মানুষের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য।’
‘আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার পথে কোনো বাধা দেখছি না। নির্বাচন না-ও হতে পারে, এমন দুশ্চিন্তার তো কোনো কারণ নেই। আমরা অপেক্ষা করছি, সরকার এ ব্যাপারে শিগগিরই তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য নিয়ে আসবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সে অনুযায়ী পরামর্শ দেবে।’
এর আগে, গত ২০ জুলাই চট্টগ্রামে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচিতে এসে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম হাটহাজারী মাদরাসায় যান।