যশোর: যশোরে ২০২৪ সালের জুন-জুলাই মাসের তুলনায় চলতি ২০২৫ সালের একই সময়ে বৃষ্টিপাত তিনগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ বছর জুলাই মাসে এক মাসেই ৭১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুধু বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে মাত্র দুই ঘণ্টায় ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকলেও দুপুরের দিকেই মূলত ভারী বৃষ্টি হয়েছে।
যশোর বিমানবাহিনীস্থ আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার (১ আগস্ট) ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে এবং আগস্ট মাস জুড়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে যশোর শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় সমস্যা থাকায় বৃষ্টিপাত বাড়লে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০৩ সেন্টিমিটার (২০৩০ মিলিমিটার) হলেও তা অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। যশোরের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সাধারণভাবে তা ১,৫০০ মিলিমিটার বলে ধরা হয়। অথচ এ বছর জুন ও জুলাই মাসে মোট ১,০০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যেখানে গত বছর এই সময়টায় তা ছিল ৪০০ মিলিমিটারেরও কম।
আবহাওয়া অফিস ও অন্যান্য সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বর্ষাকাল অর্থাৎ জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হয়ে থাকে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও আর্দ্র মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই সময় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। চলতি বছর মৌসুমি বায়ু আগেভাগেই প্রবেশ করায় দেশজুড়ে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। বিশেষ করে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জুন-জুলাইতেই বেশি বৃষ্টি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত বছর জুনে যশোরে মাত্র ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যেখানে এ বছর জুন মাসে তা বেড়ে ২৮৮ মিলিমিটারে পৌঁছেছে। গত বছরের জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত ছিল ৩১৫ মিলিমিটার, অথচ এই বছরের জুলাই মাসে (৩১ জুলাই পর্যন্ত) তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১৯ মিলিমিটার। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা সারাবাংলাকে এ তথ্য জানান।
তিনি আরও বলেন, ১ আগস্ট শুক্রবার খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে, যার মধ্যে যশোরও রয়েছে। এছাড়া ৩ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত যশোরে আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে বন্যা সতর্কীকরণ বিভাগ ভালো বলতে পারবে। তবে যশোরে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা চলমান থাকায় প্লাবনের সম্ভাবনাও রয়েছে, বিশেষ করে যদি পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশিত না হয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর সাধারণত বৃষ্টিপ্রবণ মাস, এ সময় জলাবদ্ধতা দীর্ঘায়িত হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে মণিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুর এলাকার মানুষ জানান, গত বছর বৃষ্টির কারণে ভবদহ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। এ বছরও বিল ও নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। কেশবপুরের কোনো কোনো এলাকায় রাস্তা ও বাঁধ কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরও যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে, তবে বিলগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
যশোর শহরের বাসিন্দারা জানান, শহরের পানি সাধারণত বিল হরিণা দিয়ে অপসারিত হয়। তবে বর্তমানে অনেক স্থান ভরাট, উঁচু হয়ে যাওয়া এবং দখল হওয়ায় পানি অপসারণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যদিও এ বছর যশোর পৌরসভা ড্রেন পরিস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, ফলে এখনো মারাত্মক জলাবদ্ধতা হয়নি। তবে শংকরপুর, বারান্দিপাড়া, খড়কি এবং পালবাড়ি এলাকার কিছু অংশে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে কয়েকদিন জলাবদ্ধতা দেখা গিয়েছিল।
বুধ ও বৃহস্পতিবারের টানা বৃষ্টিতে শহরের অনেক এলাকায় পুনরায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যদি বৃষ্টি এভাবে অব্যাহত থাকে এবং বিল হরিণা দিয়ে পানি সঠিকভাবে অপসারিত না হয়, তাহলে শহরের অনেক অংশই পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু শহর নয়, মণিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর ছাড়াও শার্শা, বাঘারপাড়া, ঝিকরগাছা ও সদর উপজেলার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
আগস্ট মাস সাধারণত বৃষ্টিপ্রবণ সময় এবং এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে একক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড গড়েছিল মাত্র ১৫ ঘণ্টায় ২০২ মিলিমিটার। একই বছর সেপ্টেম্বরে একদিনে রেকর্ড করা হয়েছিল ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
উল্লেখ্য, দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত সাধারণত সিলেট, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে হয়ে থাকে, যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ৪ হাজার ১৮০ মিলিমিটার। অন্যদিকে, পশ্চিম-মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের (যেমন: রাজশাহী, নাটোর, যশোর, কুষ্টিয়ার পশ্চিমাংশ) কিছু এলাকায় গড় বৃষ্টিপাত মাত্র ১ হাজার ৫০০ মিলিমিটার। যদিও গত বছর যশোরে এর আগের বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।