Monday 04 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাশিয়া-ভারত সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্পের ‘চাপে’ বৈশ্বিক তেলবাজারে অস্থিরতার শঙ্কা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১ আগস্ট ২০২৫ ২০:১৬ | আপডেট: ১ আগস্ট ২০২৫ ২১:৩০

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপে ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে একটি নতুন জ্বালানি সংকট তৈরি হতে পারে। এর ফলে শুধু ভারত নয়, পশ্চিমা দেশগুলো এবং রাশিয়াও বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। ভারত বর্তমানে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এই বাণিজ্য বন্ধ হলে রাশিয়া প্রতিশোধ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল পাইপলাইন বন্ধ করে দিতে পারে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) দ্য ইকোনোমিক টাইমসে এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ভারত প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল তেল কেনে, যা বৈশ্বিক সরবরাহের ২ শতাংশ। চীন এবং তুরস্কও রাশিয়ার তেলের অন্যতম প্রধান ক্রেতা।

বিজ্ঞাপন

বিশ্লেষক জেপি মরগান বলেন, ‘ভারতের বাজার ক্রেমলিনের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এটি বন্ধ হয়ে গেলে রাশিয়া প্রতিশোধ নিতে কাজাখস্তান থেকে আসা সিপিসি (সিপিসি) পাইপলাইন বন্ধ করে দিতে পারে। এই পাইপলাইনে মার্কিন তেল কোম্পানি শেভরন এবং এক্সন -এর বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে।’ এই জায়গায় রাশিয়ারও দর কষাকষির ক্ষমতা আছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

এদিকে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যদি মস্কো ৭-৯ আগস্টের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তি না করে, তাহলে তিনি যেসব দেশ রাশিয়ার তেল কিনছে তাদের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসাবেন। এর পাশাপাশি, ভারতের আমদানি করা সব মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রয়টার্স জানিয়েছে, ট্রাম্পের হুমকির কারণে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় তেল শোধনাগারগুলো এই সপ্তাহে রাশিয়ার তেল কেনা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারত ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কেনা শুরু করে। এর আগে রাশিয়ার প্রধান ক্রেতা ছিল ইউরোপ। কিন্তু ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের কারণে ইউরোপ রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ভারত শীর্ষ আমদানিকারক হয়ে ওঠে। রাশিয়ার তেল কোম্পানি রোসনেফট (Rosneft)-এর ভারতের অন্যতম বৃহত্তম তেল শোধনাগারে বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে।

ভারতের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে ভারত এখন রাশিয়ার তেলের ওপর ৩৫ শতাংশ নির্ভরশীল। যার মূল্য ৫০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

বিএনপি পরিবাস-এর আলডো স্প্যানজার বলেছেন, ‘এই সরবরাহ বন্ধ করতে হলে বাণিজ্য প্রবাহে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। বৈশ্বিক সরবরাহ ইতিমধ্যেই সীমিত হয়েছে।’

এলএসইজি (এলএসইজি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারত রাশিয়ার সব ধরনের তেল কেনে; এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমের বন্দর থেকে আসা উরালস (Urals), প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এসপিও (ইএসপিও) এবং সোকোল (Sokol), এবং আর্কটিক অঞ্চলের কিছু তেল।

যদি ভারত কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে উরালস তেল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ ভারত আয়তনের দিক থেকে রাশিয়ার বৃহত্তম এই রফতানি গ্রেডের প্রায় ৭০ শতাংশ কেনে। ভারতের জ্বালানিমন্ত্রী বলেছেন, দেশ বিকল্প সরবরাহ খুঁজে নিতে পারে।

ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে অপরিশোধিত তেলের আমদানি বাড়াতে হবে অথবা শোধনাগারের উৎপাদন কমাতে হবে। যার ফলে ডিজেলের দাম বাড়বে, বিশেষ করে ইউরোপে। কারণ ইউরোপ ভারত থেকে জ্বালানি আমদানি করে।

স্পার্টা কমোডিটিস-এর নীল ক্রসবি বলেন, ‘ভারতীয় শোধনাগারগুলো রাশিয়ার ভারী মানের অপরিশোধিত তেলের বিকল্প খুঁজে পেতে হিমশিম খাবে। তাই তারা সম্ভবত উৎপাদন কমিয়ে দেবে।’

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া ২০২২ সাল থেকে তেল বিক্রি চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে, যদিও তারা বিশ্ববাজারের দামের তুলনায় কম দামে তেল বিক্রি করছে।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম হওয়ায় রাশিয়ার আয় ইতিমধ্যে চাপের মধ্যে রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুনে তাদের তেল ও গ্যাসের রাজস্ব গত বছরের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ২০২৩ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, দুর্বল বৈশ্বিক তেলের দাম এবং শক্তিশালী রুবলের কারণে জুলাই মাসে রাজস্ব ৩৭ শতাংশ কমবে।

যদি ভারত তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে রাশিয়ার কোম্পানিগুলোকে ট্যাংকারে তেল মজুদ করতে হবে, যার জন্য তাদের শিপিং খরচ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে এবং নতুন ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক ছাড় দিতে বাধ্য হতে হবে, এমনটাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, প্রতিদিন ২০ লাখ ব্যারেল রফতানি কমে গেলে রাশিয়াকে ধীরে ধীরে তেলের উৎপাদন বর্তমান দৈনিক ৯০ লাখ ব্যারেলের স্তর থেকে কমাতে হতে পারে। রাশিয়ার বর্তমান উৎপাদন ওপেক প্লাজ কোটা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

জেপি মরগান বলেন, ‘রাশিয়া কিছু তেল (প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ ব্যারেল) মিশর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, পেরু, ব্রুনাই, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইন্দোনেশিয়ায় পাঠাতে পারে।’

মস্কো সিপিসি পাইপলাইন বন্ধ করেও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে যাতে পশ্চিমারা তেলের উচ্চ মূল্য সংকটে পরে। পশ্চিমের তেল কোম্পানি এক্সন, শেভরন, শেল, ইএনআই এবং টোটালএনার্জিজ প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল তেল এই পাইপলাইনের মাধ্যমে পাঠায়, যার মোট ক্ষমতা প্রতিদিন ১৭ লাখ ব্যারেল।

ক্রসবি বলেন, ‘যদি আমরা রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল শুদ্ধ করতে একটি দৃশ্যমান এবং যথেষ্ট অসুবিধা দেখি। এ ছাড়া পুতিন সিপিসি বন্ধ করে দেন, তাহলে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে, সম্ভবত আরও অনেক বেশি।’

সিপিসি পাইপলাইন রাশিয়ার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে গেছে এবং এই কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে মস্কোর আগে থেকেই বিরোধ ছিল। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে মস্কো পরিবেশ ও ট্যাংকার নিয়ন্ত্রণের কারণ দেখিয়ে পাইপলাইনের কার্যক্রম কয়েক দিনের জন্য স্থগিত রাখার আদেশ দিয়েছিল।

যদি সিপিসি পাইপলাইন এবং ভারতে রাশিয়ার তেলের সরবরাহ উভয়ই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে প্রতিদিন ৩৫ লাখ ব্যারেল বা বৈশ্বিক সরবরাহের ৩.৫ শতাংশ বিঘ্নিত হবে।

জেপি মরগান বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন, তার পূর্বসূরিদের মতো, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রফতানিকারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সম্ভব বলে মনে করবে না, কারণ এতে তেলের দাম অনেক বেড়ে যাবে।’

সারাবাংলা/এইচআই

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাশিয়া শুল্ক আরোপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর