Monday 04 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক কমানো অন্তর্বর্তী সরকারের বড় অর্জন: মির্জা ফখরুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ আগস্ট ২০২৫ ২০:৪১ | আপডেট: ১ আগস্ট ২০২৫ ২৩:৪৯

উত্তরায় সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত পালটা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়টিকে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় অর্জন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর উত্তরা আজমপুরে অনুষ্ঠিত এক গণসমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আজ একটা ভালো খবর আছে। কয়েকদিন আগে আপনারা দেখেছেন যে আমেরিকা আমাদের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। আমরা যেসব পণ্য রফতানি করব তার ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে নেবে। অর্থাৎ আমাদের যে জিনিসটার দাম ১০০ টাকা, ওটার সঙ্গে আরও ৩৫ টাকার যোগ হবে। তার মানে ১০০ টাকার জিনিস ১৩৫ টাকা দাম হবে। ফলে আমাদের জিনিসটা আর বিক্রি হবে না।’

বিজ্ঞাপন

প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমিয়ে আনতে উপদেষ্টাদের প্রচেষ্টার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটা একটি বড় অর্জন। দেশের স্বার্থে যে কাজগুলো হচ্ছে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরার দায়িত্বও রাজনৈতিক নেতাদের।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। যদিও সরকার এখনো পুরোপুরি সেটা করতে পারেনি, তবে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, সেজন্যও ধন্যবাদ জানাই।’

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে ফখরুল বলেন, ‘আমরা এমন একটি গণতন্ত্র চাই, যেখানে মানুষ মুক্তভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে, নিজেরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে। দিনের ভোট রাতে, ইচ্ছেমতো ব্যাংক লুট বা ব্যবসা-বাণিজ্য নয়— একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার চাই।’

তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ঘোষণার ভিত্তিতে বিএনপি দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সংসদ চাই, যেখানে জনগণের প্রতিনিধি সত্যিকার অর্থে জনগণের কথা বলবে।’

ফখরুল আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার পরিস্থিতিকে ‘ভয়ংকর ফ্যাসিবাদ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমরা আপাতত মুক্ত হয়েছি, কিন্তু এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে, যখন তাদের (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করতে পারব। তারা যেন আর কখনো ক্ষমতায় ফিরে না আসতে পারে।’

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সংস্কার কমিশনের বৈঠক শেষ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আশা করছি, দু’একদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা কথা দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে…। এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়, একটা নির্বাচিত সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা করতে চায়।‘

তিনি আরও বলেন, ‘আমার তো যাওয়ারই জায়গা নাই। এখন আমার কোনো সমস্যা হলো, আমি কার কাছে যাব? কোনো এমপি নাই তো? আছে? তাহলে আমি যাব কার কাছে। আমার সমস্যাটা পার্লামেন্টে কে তুলে ধরবে? লোক নাই। কে পার্লামেন্টে আমার দাবি নিয়ে কথা বলবে? লোক নাই। এজন্যই আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার, খুব দ্রুত পার্লামেন্ট দরকার। যে পার্লামেন্টে আমরা আমাদের কথাগুলো বলতে পারব।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটা বিরাট ভয়ংকর একটা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে আপাতত মুক্তি পেয়েছি। এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে যখন তাদেরকে আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা লুটপাট করে, যারা ব্যাংক লুট করে, চাঁদাবাজি করে, যারা মানুষের সম্পত্তি দখল করে নিয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রকমের আপস থাকবে না। তাদেরকে আমরা কখনোই স্বীকার করব না এবং তাদেরকে কোনো মতেই সামনে আসতে দেব না।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ওপরে যে আস্থা রেখেছিল জনগণ একইভাবে আজ তারা তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখছে। অপেক্ষা করছি, কবে তিনি দেশে আসবেন। কবে নেতৃত্ব দেবেন। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, যেন তিনি অতি দ্রুত দেশে আসেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন, সেটাই কামনা।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘তারেক রহমান বলছেন, আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। যে বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, ভোট দিতে পারবে, সাধারণ গরিব মানুষ সে গরিব থাকবে না, আস্তে আস্তে সে উন্নতির দিকে যাবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’’

আগামীতে তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রান্তিক মানুষের জন্য ‘ফার্মার্স কার্ড’, ‘স্বাস্থ্য কার্ড’, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নিয়েছেন তার কথাও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

এক বছর আগে এই দিনে উত্তরা উত্তাল হয়েছিলে উল্লেখ করে ফ্যাসিবাদী পতনের আন্দোলনের শেষ দিকে শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের শহিদদের পরিবারের বেদনা-কষ্টের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেন, ‘শহিদদের ভুলে গেলে চলবে না। যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, তাদের কথা মনে রাখুন। এই অনুভূতিই দেশকে বদলাতে পারে।’

ফখরুল বলেন, ‘এখন মানুষ স্লোগান দেখতে চায় না, মানুষ কাজ দেখতে চায়। মানুষ চায় বাংলাদেশ ভালো থাকুক। রাজনীতি যেন সেই ভালো থাকার পথ দেখায়।‘

দেশে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা, আমাদের মানুষ—এত আত্মত্যাগ করেছে। তার বিনিময়ে যদি অস্থিরতা দেখতে হয়, সেটা কষ্টের।’

তিনি এক সুন্দর, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক এবিএমএ আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম নিরব, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, জাসাসের হেলাল খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীরসহ শহিদদের পরিবারের সদস্যরা সমাবেশে বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/এফএন/এইচআই

অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মির্জা ফখরুল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর