রংপুর: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করছে না, তারা বিলাসিতা ও স্বার্থপরতায় মগ্ন– এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম।
শনিবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় জুলাই অভ্যুত্থানে প্রথম শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ছাত্র উপদেষ্টারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘তাদের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক ধরনের দুর্নীতির চিত্র আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। পুরো জুলাই মাসটিকে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অপচেষ্টা চলছে। জুলাই মাসের যে সার্বজনীনতা ও ঐক্য ছিল, তা নষ্ট করার জন্য দায়িত্বশীলদের বিভাজনমূলক আচরণ জাতিকে চরম হতাশ করেছে।’
শহিদের রক্তের বিনিময়ে যাদের অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় এনেছিলাম, তারা আজ জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করছে না উল্লেখ করে সাদিক কায়েম বলেন, ‘খুনি হাসিনার ১৬ বছরে যে পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, জুলাই আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার কর্মী শহিদ হয়েছেন, প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এসব ঘটনার বিচার হবে। কিন্তু, গত এক বছরে একটি ঘটনারও বিচার হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘খুনি হাসিনা ১৬ বছর ধরে কালচারাল স্ট্যাবলিশমেন্ট (সাংস্কৃতিক প্রাতিষ্ঠানিকতা) কায়েম করে শাহবাগ কেন্দ্রিক অবৈধ শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই সাংস্কৃতিক আধিপত্য এবং মুজিববাদ এখনো আমরা ভাঙতে পারিনি। এই কালচারাল স্ট্যাবলিশমেন্ট ভাঙতেই হবে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তিকে সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিহত করতে হবে। জুলাইয়ের চেতনাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। জুলাইকে কেন্দ্র করে নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ রচনার ব্যবস্থা করতে হবে।’
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে সাদিক কায়েম বলেন, ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। কিন্তু, কিছু পক্ষ এটিকে নিজেদের স্বার্থে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে। আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করছি, শহিদদের আকাঙ্ক্ষা ও চেতনার প্রতিফলন যদি সনদ ও ঘোষণাপত্রে না থাকে এবং ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ৯ দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ও সমন্বয় না হয়, তাহলে জাতি এই সনদ ও ঘোষণাপত্র মেনে নেবে না। আমরা চাই, সকল অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয় করেই চূড়ান্ত সনদ ও ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হোক।’
কেউ যদি জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে বেঈমানি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে হুঁশিয়ারি দিয়ে সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমাদের কিছু সহযোদ্ধা, যাদের সঙ্গে আমরা জুলাই আন্দোলন করেছি, তাদের আচরণ আমাদের কষ্ট দিয়েছে। আমাদের আদর্শ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু জাতির স্বার্থে, বিশেষ করে জুলাই ইস্যুতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত ছিল। তারা বারবার আক্রমণ করলেও আমরা ভালোবাসা দিয়েই মন জয় করতে চাই।’