Sunday 05 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাইয়ের দিনলিপি
শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে ১ দফা, ৪ আগস্ট থেকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’র ডাক

ফারহানা নীলা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ আগস্ট ২০২৫ ০৮:০৭ | আপডেট: ৩ আগস্ট ২০২৫ ১৮:০৪

জুলাইয়ের দিনলিপি। ৩ আগস্ট ২০২৪। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ৩ আগস্ট ২০২৪, অর্থাৎ ৩৪ জুলাই। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এদিন অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করেন। আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এদিন বিকেল ৫টায় হাজারো মানুষের সামনে এই ঘোষণা দেন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের আহ্বান সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।

এর আগে, সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘গণভবনের দরজা খোলা। আমি আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে বসতে চাই।’ কিন্তু নাহিদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘আমরা শুধু শেখ হাসিনার নয়, পুরো মন্ত্রিসভার পদত্যাগ চাই।’ তিনি বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের জন্য শেখ হাসিনার বিচার করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা এমন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাই, যেখানে আর কখনো স্বৈরাচার ফিরে আসতে না পারে।’ তিনি সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে একটি ‘জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনের ঘোষণা দেন এবং পূর্বঘোষিত সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে ৪ আগস্ট থেকে অংশ নিতে দেশের জনগণকে আহ্বান জানান।

১৫ দফা ঘোষণা

আন্দোলনের আরেক প্রধান সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ১৫ দফার অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

  • কর ও ইউটিলিটি বিল বর্জন
  • সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা বন্ধ
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা
  • রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ
  • সকল সরকারি অনুষ্ঠান ও সভা বর্জন
  • বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ
  • গণপরিবহন বন্ধ, শ্রমিকদের কর্মবিরতি
  • ব্যাংক কেবল রোববার জরুরি লেনদেন করবে
  • সেনাবাহিনী ব্যতীত অন্য বাহিনী ব্যারাকেই থাকবে
  • দফা এক, দাবি এক

এদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। দোয়েল চত্বর, জগন্নাথ হল, ঢাকা মেডিকেল ও শিববাড়ী মোড়জুড়ে হাজারো মানুষ জমায়েত হন। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যের চোখ লাল কাপড়ে ঢেকে দেয় বিক্ষোভকারীরা এবং পরে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে।

শহরের অন্যান্য এলাকায়ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, সায়েন্স ল্যাব এবং মিরপুরে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। মিরপুর-১০ গোলচত্বরে হয় বিশাল বিক্ষোভ। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও ডিওএইচএস এলাকায় বিচারের দাবি নিয়ে সমাবেশ করেন।

সেনাসদস্যদের উদ্দেশে সেনাপ্রধানের ভাষণ

এদিন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রাজধানীর সেনা সদরদফতরে অবস্থিত হেলমেট অডিটোরিয়ামে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি আর ভাষণে যেকোনো পরিস্থিতিতে জনগণের জীবন, সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের বিশ্বাসের প্রতীক এবং তারা দেশ ও জনগণের স্বার্থে সবসময় জনগণের পাশে থাকবে।’ তিনি সেনা কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো বিভিন্ন গুজব সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেন এবং আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় চার সাংবাদিক হত্যার জন্য সরকারের পদত্যাগ দাবি করে।

ঢাকার বাইরেও উত্তাল আন্দোলন

রাজধানীর বাইরেও আন্দোলন বিস্তৃত হয়। যাত্রাবাড়ীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। সিলেট, কুমিল্লা, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়। গাজীপুরে নিহত হন এক বিক্ষোভকারী।

চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবন এবং এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে হামলা হয়। রংপুরে আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কুমিল্লার রেসকোর্স এলাকায় সরাসরি গুলি চালায় সরকার দলীয় কর্মীরা।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ওই সময় চলমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ২২ মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি রক্ষায় আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সারাবাংলা/এফএন/পিটিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

ফারহানা নীলা - আরো পড়ুন