ঢাকা: জুলাই শহিদদের সাহসিকতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশের প্রতিটি মানুষ জুলাই অভ্যুত্থানের রূপকার ছিলেন। নানান জন নানা কথা বললেও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল বলেই আন্দোলন সফল হয়েছে। মানুষের এই চাওয়াকে পরিপূর্ণ করতে পারে শুধুমাত্র সুশিক্ষা। সুশিক্ষা না থাকলে কোনো কিছুই কাজে আসবে না। গত একবছরে আমরা প্রকৃতপক্ষে কতটুকু পরির্বতন আনতে পেরেছি বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম ও সচিব নজরুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে মোটামুটি চারটি ভালো নির্বাচন হয়েছে। বাকিগুলো ত্রুটিপূর্ণ। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল নজরবিহীন। কারণ, ভোটের আগেই সরকার গঠিত হয়েছিল। ১৫১ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। যেটা পৃথীবির আর কোথাও ঘটেনি। আর ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। ২০২৪ সালে তো নিজেরা নিজেরা ভোট করে রেকর্ড করেছে। তবুও শেখ হাসিনা নির্লজ্বভাবে মিথ্যাচার করেছেন। যেটিকে তিনি শিল্পে পরিণত করেছেন। নিজের পাশাপাশি আমলা, শিক্ষকসহ সবক্ষেত্রে একটি মিথ্যা শ্রেণি তৈরি করেন তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা রীতিমতো জাতির সঙ্গে মশকরা করেছেন। বিএনপির আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে ওই সময় মরদেহ পাওয়া যেত। কিন্তু হাসিনার আমলে মরদেহও পাওয়া যায়নি।’ হাসিনার নিউরোজিক্যাল ও সাইকোলোজিক্যাল বিষয়টি আলাদাভাবে পিএইচডির দাবি রাখে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সুন্দর সংবিধান থাকার পরও অনেক দেশ ভালো নেই। ভালো সংবিধানের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি প্রয়োজন। রাষ্ট্র মেরামতের মাধ্যমে জুলাই শহীদদের প্রতি আমাদের যথাযোগ্য মর্যাদা জানাতে হবে।’ এই উপদেষ্টার মতে, মানুষের আবেগের বিচ্ছুরণ ও বিক্ষুব্ধ জনতার স্রোতের দিকে তাকালে দেশ গঠন ও সংস্কার কাজ সহজ হতো।
শেখ হাসিনা তরুণ প্রজন্মকে ভুলপথে পরিচালিত করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা মিথ্যাবাদী প্রজন্ম তৈরি করেছিল। তার আমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের কৃতদাস বানিয়ে অত্যাচার চালানো হতো।’
প্রতিবেশি দেশ ভারতকে আওয়ামী সরকার অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন জানিয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভেবে ভারতকে একের পর এক সুবিধা দিতো। তার আমলে নির্বিচারে সীমান্তে অগণিত হত্যা হয়েছে। দেশের নদী ধ্বংস করে ভারতকে সড়ক তৈরি করে দেয়া হয়েছে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ নজরুল বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবনমন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বিদেশের এয়ারপোর্টে বাংলাদেশে পাসপোর্ট দেখলেই সবাই করুনার চোখে তাকায়। সবাই একধরনের অবহেলা করে। নানান রকম প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করে দেয়।’