চট্টগ্রাম ব্যুরো: রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমাদের সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মব কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি বলছি— এটাই হতে হবে যারা বলবে, আচরণ করবে, শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের কোনো ব্যবধান নেই। তারা একই লাইনের মানুষ।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা কিন্তু চলে গেছে। সে কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বৈরাচার রেখে গেছে আমাদের মধ্যে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফ্যাসিস্ট রেখে গেছে। আচার-আচরণে দেখবেন, এটা হতে হবে, এটা দিতে হবে, এটা না দিলে আমরা নাই। আমি তো মালিক হই নাই এ দেশের, মালিক হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ। এই গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতায় আপনাকে আসতে হবে। নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হচ্ছে কারেকশন প্রসেস, আপনি ভুল করলে যা আপনাকে সংশোধন করবে; প্রতিবাদ করবেন গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে। আধা গণতন্ত্র, থ্রি-কোয়ার্টার গণতন্ত্র- এসব দিয়ে হবে না। পরিপূর্ণ গণতন্ত্র লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমি বলেছি- সেজন্য এটাই করতে হবে? না, আমরা বাংলাদেশের জনগণের মালিকানার জন্য যুদ্ধ করেছি এত বছর, প্রাণ দিয়েছি, জেল খেটেছি, ত্যাগ স্বীকার করেছি- বাংলাদেশের লক্ষ কোটি মানুষ। আবার যদি শেখ হাসিনার মন-মানসিকতায় চলে যাই, সেটা গণতান্ত্রিক মানসিকতা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আপনাকে আস্থা রাখতে হবে বাংলাদেশের মালিক যারা জনগণ, তাদের ওপর। যত পরিবর্তন, যত সংস্কার, যত আগামী দিনের রূপরেখা- এটাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে আসতে হবে। জনগণের কাছে আপনাকে যেতে হবে, যেটা শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছিল। এই পথটা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যারা যা করতে চাইবে, জনগণের কাছে যেতে হবে। বলতে হবে, ‘আমরা এই কাজগুলো করতে চাই নতুন বাংলাদেশের জন্য’। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আপনি আগামী দিনের পরিবর্তন আনবেন। আপনার নিজের ম্যান্ডেট না।’
নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর বাংলাদেশের মানুষের মনে যে প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা জেগেছে- এটা যদি আমরা ধারণ করতে না পারি, সবকিছু বৃথা যাবে। কোনো রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল যদি এটা ধারণ করতে না পারে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ নেই। শেখ হাসিনার যে কারণে ফ্যাসিস্ট হয়েছে- গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে এককভাবে যা করতে চেয়েছে, আমাদেরকে গণতন্ত্র পরিপূর্ণভাবে পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। সেই গণতন্ত্র প্রবর্তনের জন্য আমাদেরও মন-মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন আছে। এ জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখন প্রত্যয়- বিল্ড দ্য ন্যাশন। এই ত্যাগের প্রতি যদি সম্মান জানাতে চাই, তাহলে যার যার জায়গা থেকে দেশ গড়ার কাজ করতে হবে। রাজনীতির সাথে সাথে অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। দেশের প্রত্যেক মানুষের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।’
সিভাসু’র উপাচার্য মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন— চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ, সিভাসু’র পরিচালক এ কে এম সাইফুদ্দিন, মোহাম্মদ রাশেদুল আলম ও এ কে এম হুমায়ুন কবির এবং প্রক্টর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এ ছাড়া গণঅভ্যুত্থানে আহত সিভাসু’র শিক্ষার্থী রাহাত বিন জাহাঙ্গীরও বক্তব্য দেন।