ঢাকা: আজ ২২ শ্রাবণ। শ্রাবণের মেঘলা আকাশ, সজল বাতাস আর শোকাবহ এক স্মৃতি। এই দিনেই বাংলা সাহিত্যের দিগন্তজয়ী পুরুষ, নোবেলজয়ী কবি, দার্শনিক, সংগীতজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইহলোক ত্যাগ করেন। ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে পৃথিবীর আলো থেকে চোখ ফিরিয়ে নেন বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আজ তার ৮৪তম প্রয়াণ দিবস।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল একজন কবি নন, তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক মহাসাগর। তার হাতে বাংলা সাহিত্য পেয়েছে নতুন প্রাণ, নতুন রূপ ও নতুন দিগন্ত। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়ে তিনি শুধু নিজের নয়, সমগ্র বাংলা জাতির গৌরব হয়ে উঠেছিলেন।
গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান, নাটক, প্রবন্ধ, সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথের ছাপ নেই। তার সৃষ্টিতে যেমন রয়েছে রোমান্টিক সৌন্দর্য, তেমনই রয়েছে সমাজতাত্ত্বিক ভাবনা, দার্শনিক আত্মজিজ্ঞাসা, মানবতার জয়গান।
‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’- এই কবিতায় যেমন রয়েছে জীবনের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, তেমনই ‘মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের মূল্য দিতে হয় / সে প্রাণ অমৃতলোকে মৃত্যুকে করে জয়’- এই চরণে ধরা পড়ে তার চিরন্তন জীবনদর্শন।
কবিতার পাশাপাশি তিনি গানে এনেছেন নতুন ধারা, যাকে আমরা বলি রবীন্দ্রসংগীত। তার গানের বাণী আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আবিষ্ট করে রেখেছে। জীবনের শেষ পর্বে এসে তিনি হাত দিয়েছেন চিত্রকলায়ও, যেখানে ধরা পড়েছে তার অন্তর্জগতের বিমূর্ত ভাবনা।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন এক অদম্য মানবতাবাদী। সাম্রাজ্যবাদ, জাতিভেদ, ধর্মীয় সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। তার সাহিত্য ও দর্শনের মূল সুর ছিল মুক্তি, মানবতা এবং আত্মার গভীর উপলব্ধি।
তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে বড় সত্য এই, যে আমরা মানুষ এবং মানুষের তরে আমাদের কর্ম, আমাদের জীবন।’
রবীন্দ্রনাথ আমাদের শিখিয়েছেন মৃত্যু একটি দরজা, কিন্তু সৃষ্টির ভেতর দিয়েই সম্ভব অমরত্বের পথে যাত্রা। সেই যাত্রাপথে তার সাহচর্যেই আমরা খুঁজি জীবন, ভালোবাসা ও সত্যের রূপ।
আজকের দিনে, কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে আমরা শুধুমাত্র তার মৃত্যু নয়, বরং তার সৃষ্টি ও দর্শনের এক নবজাগরণ উপলব্ধি করি। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি সেই মানুষটিকে, যিনি আমাদের শিখিয়েছেন সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পের মধ্যে দিয়েই মানুষ সত্যিকার অর্থে মানুষ হয়ে ওঠে।