ঢাকা: জুলাই ঘোষণাপত্র ও অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনী রোডম্যাপের বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আজ এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রের ১৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে ‘সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে…’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ২০২৪ এর আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে। হাইকোর্টের রায় কোটা পুনর্বহাল না করলে এ আন্দোলনের সূচনা হতো না। দুর্নীতি নয় বরং কোটা সংস্কারই ছিল এই ঐতিহাসিক ছাত্র আন্দোলনের মূল প্রেক্ষাপট।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রে আমাদের ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি ইতিহাস বিকৃতি, যা আগামী প্রজন্মকে মিথ্যা শেখাবে—যেমনটা ’৭১-এর ইতিহাস নিয়েও হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাপত্রের ১৭ ও ১৮ নম্বর দফা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গণঅধিকার পরিষদের নেতারা। তারা জানান, ঘোষণাপত্রে শহিদের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়েছে, যা ‘মুক্তিযুদ্ধের শহিদ সংখ্যা নিয়েও রাজনীতির’ পুনরাবৃত্তি।
“জাতিসংঘ বলছে, ১৪০০ জনের বেশি নিহত, সরকারি গেজেটে ৮৩৬ জন শহিদের নাম রয়েছে। অথচ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে ‘প্রায় এক হাজার’। কেন এই সংখ্যার বিকৃতি?”-বলেন রাশেদ খান।
তারা প্রশ্ন তোলেন, ‘যে ফ্যাসিস্ট বাহিনী ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়েছে, তাদের আজও গ্রেফতার করা হয়নি কেন? সেই বাহিনীগুলোর সংস্কার হয়নি কেন?’
ঘোষণাপত্রে অন্যান্য আন্দোলন ও ঘটনার অনুপস্থিতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতারা। ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড, আবরার ফাহাদ হত্যাসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ প্রসঙ্গে তারা বলেন, “বিচার ও সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে কিছুটা ধোঁয়াশা কেটেছে, তবে নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম ও অ্যাডভোকেট সরকার নূরে এরশাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।