ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি নেই। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের লক্ষ্যেই নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ইসি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে ভাষণের পরদিন সাংবাদিকদের সামনে ইসির প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘এখন তো সেই অবস্থা নাই। অনেক ইমপ্রুভ করে গেছে। ভোট তো আরো কয়েক মাস আছে। এর মধ্যে দেখবেন যে ইনশল্লাহ এভরিথিং ইন প্লেস এবং আমার বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা কোন সমস্যা সৃষ্টি করবে না।’
সিইসি জানান, ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ সম্পন্ন হয়েছে, যা ৩১ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তিতে তফসিল ঘোষণার এক মাস আগেই সম্পূরক তালিকা তৈরি করা হবে।
নির্বাচনী প্রস্তুতির অগ্রগতি প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ইলেকটোরাল রিফর্মস কমিশন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলাপ করেছে, যার ফলে অনেক প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে গেছে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য কমিশন এক মাসব্যাপী পরিকল্পনা নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা সর্বাগ্রে। আয়নার মতো স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনই আমাদের লক্ষ্য, বিশ্ববাসী দেখুক আমাদের চেষ্টার কোন ঘাটতি আছে কিনা। আমরা লুকিয়ে কোনো কাজ কাজ করতে চাই না।’
এএমএম নাসির উদ্দিন জানান, ‘প্রস্তুতি নিয়ে বললে ভোটার তালিকা হয়ে যাচ্ছে। প্রকিউরমেন্ট টার্গেট ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ করে ফেলতে পারব। টেন্ডারেন্ডার হয়ে গেছে। তারপরে ডিলিমিটেশন (সীমানা নির্ধারণ) স্বচ্ছভাবে হয়েছে। শুনানি করে শেষ করা হবে।’
‘একটা বড় কাজ হয়ে গেছে পার্টি রেজিস্ট্রেশন। ইতোমধ্যে যাচাই বছাই চলছে। যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে তাদের বিষয়ে তদন্ত হবে, এরপর কারো আপত্তি আছে কিনা ১৫ দিনের বিজ্ঞপ্তি হবে। এসব বড় কাজ সেপ্টেম্বর হবে ; ইনশাআল্লাহ উই ওয়ান্ট টু কমপ্লিট অল দিস বিগ টাস্ক।’
ভোটের কাজে সম্পৃক্ত ৮-৯ লাখ জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রায় ১০ লাখ জনবলকে পোস্টাল ব্যালটের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এছাড়া সাংবাদিকদের জন্যও এ প্রক্রিয়া প্রযোজ্য হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
তফসিল ও সময়সূচি নিয়ে সিইসি জানান, ‘ডিসেম্বরের শেষার্ধে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ভোটের তারিখ নির্ধারণের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহারের সময়সূচি ইসি সভার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে।’
লেভের প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সহযোগিতা চান সিইসি।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘জেতার জন্য যেনতেনভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন না। আমাকে সাহায্য করুন। আমি একটা সুন্দর ক্রেডিবল ও ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশন দিতে চাই; আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া পারব না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সব খেলোয়াড় যদি ফাউল করার নিয়তে মাঠে নামে, তাহলে রেফারির পক্ষে ম্যাচটি সুন্দরভাবে শেষ করা সম্ভব নয়। কাজেই দলের দায়িত্বশীল ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই মেসেজটা রাজনীতির দলগুলোকে দিতে চাই।’
দলগুলোকে অন্যতম অংশীদার উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘তারা একটা মেজর স্টেক হোল্ডার। আমাদের দায়িত্ব হবে খেলার মাঠটা তাদের জন্য সমান করে দেওয়া। তারা সুন্দর একই অপরচুনিটি পায় সেই চেষ্টাটা আমরা করছি এবং করব।’
ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশার কথাও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ভোট করতে পারবে কিনা, এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভোট দিতে পারবে।’ তবে দলের নেতাকর্মীরা ভোট দিতে পারবে কিনা—এ বিষয়ে তিনি সরাসরি উত্তর দেননি।