Monday 11 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণমাধ্যম নীতিমালা সংশোধনে সিইসিকে আরএফইডি’র স্মারকলিপি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ আগস্ট ২০২৫ ২০:৪৮ | আপডেট: ৬ আগস্ট ২০২৫ ২০:৫৩

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন আরএফইডি’র সিনিয়র সদস্য ও সারাবাংলা ডট নেটের হেড অব নিউজ এসএম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: গণমাধ্যম নীতিমালা স্থগিত ও সংশোধনের দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনকে স্মারকলিপি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।

নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত করা সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালাকে স্বাধীন সাংবাদিকতা, তথ্য অধিকার এবং গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থি বলে জানিয়েছে আরএফইডি।

বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সিইসিকে স্মারকলিপি দেন আরএফইডির সভাপতি কাজী জেবেল ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ সংগঠনের নেতারা।

এর আগে, নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আরএফইডি এক জরুরি মতবিনিময় সভায় সংগঠনের নির্বাহী কমিটি, সাধারণ সদস্য এবং নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালনকারী অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা সর্বসম্মতভাবে সিইসিকে স্মারকলিপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় অংশ নিয়ে আরএফইডি’র সিনিয়র সদস্য ও সারাবাংলা ডট নেটের হেড অব নিউজ এসএম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া এ নীতিমালা’র বিষয়ে নিন্দা জানান। বিগত সরকারের সময়ে সাংবাদিকদের ভোটের মাঠের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে না দেওয়ার জন্য যে নীতিমালা করা হয়েছিল, বর্তমান কমিশনের সেই নীতিমালা বহাল রাখায় তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, এই নীতিমালার বিষয়ে আমাদের গণমাধ্যমকর্মীদের সোচ্চার হতে হবে। এজন্য বর্তমান কমিটিকে এই নীতিমালা বাতিল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রয়োজনে এই নীতিমালা বাতিল করতে মানববন্ধনসহ সব ধরনের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

‘আর এই কার্যক্রমে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সব গণমাধ্যম সংগঠন আমাদের এই যৌক্তিক দাবিতে একাত্মতা প্রকাশ করবে। কারণ ভোটের মাঠের সঠিক চিত্র উঠে আসুক এই বিষয়ে সবাই একমত।’ তাই প্রয়োজনে পরবর্তীতে সব গণমাধ্যম সংগঠনকে তাদের সব কার্যক্রমে যুক্ত করার কথাও জানান তিনি।

গোলাম সামদানী ভূঁইয়া আরো বলেন, গোপন কক্ষে কখনো গণমাধ্যমকর্মীরা প্রবেশ করে না। কিন্তু আমাদের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা বলে, বিগত নির্বাচনে গোপন কক্ষে একাধিক ভোটার প্রবেশ করে একজনের ভোট আরেকজন দিচ্ছে বা কারচুপি হচ্ছে, সেসময় সাংবাদিকরা যেন সেখানে থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারে সেই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন এই অভিজ্ঞ সাংবাদিক।

দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, এই নীতিমালা আগের কমিশনের কপি-পেস্ট করা নীতিমালা। আগেও আমরা এই নীতিমালা নিয়ে তৎকালীন কমিটির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কিন্তু সেসময় প্রতিবাদ করেও কোনো ফলাফল পাইনি। কিন্তু আজকের এই পরিবর্তিত সময়ে এসেও যদি গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের জন্য বাঁধা দেয়া এই নীতিমালা করা হয়, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। বর্তমান কমিটিকে এই বিষয়ে কঠোর ও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক সভাপতি ও এটিএন বাংলার চিফ রিপোর্টার ইকরামুল হক সায়েম প্রশ্ন তোলেন—এই নীতিমালা কি সাংবাদিকদের আটকে রাখার জন্যই করা। নির্বাচনে ভোটের দিনে ভোট কেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হলে গণমাধ্যমকর্মীরা কীভাবে তা তুলে ধরবে? মাত্র ১০ মিনিটে সময় থেকে কি তুলে ধরবে গণমাধ্যম। সেইসঙ্গে লাইভ সম্প্রচার করতে না দেয়ার বিষয়েও বর্তমান কমিশনের সঙ্গে কথা বলার আহ্বান জানান তিনি।

আমরা চাইলেই কারো সাক্ষাৎকার নিতে পারব না, এর কোনো মানেই হয় না। আমরা ভোটের দিনে তাহলে জনগণকে কি তুলে ধরব। এর আগে আমাদের নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে যেতে বাঁধা দেয়া হয়েছে। আবারও যদি সেই বাঁধাই দেয়া হয় তাহলে আমাদের নতুন বাংলাদেশের কি অর্থ।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার সাজ্জাদ হোসাইন জানান, বিগত নির্বাচনে আমাদের অভিজ্ঞতা খুব বেশি সুখকর নয়। আমাদের জন্য এই নীতিমালা ভোটের মাঠে অনেক সমস্যা তৈরি করেছিল।

তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি বলেছেন, সর্বকালের সেরা নির্বাচন উপহার দিতে চান। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাজ এক্ষেত্রে একেবারেই এই কথার পরিপন্থি। এই নীতিমালার পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য কমিশনের সাথে আলোচনা করতে হবে। যদি কমিশন আগে আমাদের সাথে কথা বলত তাহলে এই সংকট হতো না।

মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে সবাই পর্যবেক্ষক ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি বাস্তবমুখি, স্বাধীন ও সাংবাদিকবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক।

সভায় আরএফইডির সভাপতি কাজী জেবেল বলেন, এই নীতিমালা স্থগিতের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া, ১৫ দিনের মধ্যে এই নীতিমালা সংশোধনের আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যমান নীতিমালায় সাংবাদিকরা আগামী সংসদ নির্বাচনের কাভার করবে না।

আরএফইডি-এর পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে চারটি বিষয় তুলে ধরা হয়: নীতিমালার প্রণয়নে গণমাধ্যম পেশাজীবীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে সময় ও সংখ্যা সীমাবদ্ধতাসহ বাস্তববিচ্যুত শর্ত আরোপ করা হয়েছে, সাক্ষাৎকার ও সরাসরি সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে একতরফাভাবে শাস্তিমূলক ধারা রাখা হয়েছে।

সারাবাংলা/এনএল/এসএস

আরএফইডি গণমাধ্যমনীতিমালা সংশোধন সিইসি স্মারকলিপি

বিজ্ঞাপন

ঢাকার বাতাসে স্বস্তি
১১ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর