চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পরও কিছু শক্তি নির্বাচনের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদ দিয়ে কোনো ‘ভাইয়ের রাজনীতি’ বিএনপিতে চলবে না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির এ নীতিনির্ধারক নেতা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেলে নগরীর নিউমার্কেট চত্বরে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর-দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য বিজয় র্যালি বের হয়, যাতে হাজারো নেতাকর্মী ধানের শীষের স্লোগানে মুখরিত করে তোলে রাজপথ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের ঘোষণা এসেছে। দেশবাসী স্বস্তি ফিরে পেয়েছে, দেশবাসী আনন্দিত। আমরা এখন নির্বাচনের সড়কে ঢুকেছি। কিন্তু এ নির্বাচনের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু কিছু শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তাদের কোনো জায়গা দেওয়া যাবে না। যারা গণতন্ত্রের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে, আগামীদিনে দেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখান করবে।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করবে, অথচ ভোটে যাবে না, রাজনীতি করবে, অথচ গণতন্ত্র বিশ্বাস করবে না, এটা তো শেখ হাসিনা বারবার করেছে। দেশের মানুষকে বাইরে রেখে সে তার মতো করে দেশ চালিয়েছে। শেখ হাসিনার পতন হয়েছে, কিন্তু আবারও কিছু কিছু শক্তি নেমেছে দেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে, জনগণকে বাইরে রেখে তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে, তাদের মতো করে দেশ চালাতে। এটা বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন গ্রহণ করবে না।’
নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, ‘নির্বাচন শেষ করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। কেউ নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়াকে, দেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার পথে যাতে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আজ থেকে শপথ নিতে হবে, সকলে যার যার এলাকায় যেতে হবে, মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে। দেশের মানুষ ধানের শীষের অপেক্ষায় আছে।’
দলের ভেতর শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের হুঁশিয়ার করে আমীর খসরু বলেন, ‘যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের রাজনীতি বিএনপিতে হবে না। বারবার বলছি, কোনো শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীর জায়গা হবে না বিএনপিতে। পাঁচ-ছয় হাজার বহিষ্কার করা হয়েছে। কোনো দখলদার, চাঁদাবাজের জায়গা নেই বিএনপিতে। সুশৃঙ্খল রাজনীতির চর্চা করতে হবে। কোনো ভাইয়ের রাজনীতি বিএনপিতে চলবে না। শুধু বিএনপির রাজনীতি করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ সহনশীল রাজনীতি চায়, দেশের মানুষ পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ জানিয়ে রাজনীতি করতে চায়। রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু একে অপরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিএনপি নতুন দিনের রাজনীতি শুরু করেছে বাংলাদেশে। আমাদের সকলকে সেটা ধারণ করতে হবে। আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। আমরা দেশের জনগণকে নিয়ে সফলভাবে গণতন্ত্রের পথে চলতে শিখেছি।’
সমাবেশে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগামী দিনে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবে। তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র বিএনপির হাতেই নিরাপদ। আমদের হৃদয়ে বাংলাদেশ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি জনগণের রায় নিয়েই ক্ষমতায় আসবে।’
কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তারেক রহমান ডাক দিয়েছেন। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও দক্ষিণের সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিন এবং নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আজম খাজার পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলার সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও তরিকুল ইসলাম তেনজিং এবং দক্ষিণের আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া।