Monday 11 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনী
ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগসহ ৫ দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
৬ আগস্ট ২০২৫ ২২:২৪

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের জুলাইয়ের বিশেষ চিত্র প্রকাশনীতে ‘দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী’র ছবি প্রদর্শনের জন্য ছাত্রশিবিরের প্রতি নিন্দা জানিয়ে তাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একইসঙ্গে এই ঘটনাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় ব্যর্থতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিও জানায় সংগঠনটি।

বুধবার (৬ আগস্ট) বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির প্রাঙ্গণে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের আত্মদানকে অপমান করল ইসলামী ছাত্রশিবির। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যাকারী পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী আত্মস্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে চিহ্নিত রাজাকারদের ছবি প্রদর্শনীতে স্থান দেওয়ার মাধ্যমে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় একটি কাজ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নাগরিকেরা এসব ছবি প্রদর্শনীর বিরুদ্ধে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বা তার কার্যালয় সারাদিনে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। পরবর্তী সময়ে আমরা সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে প্রক্টরিয়াল টিম বেশ ধীর গতিতে এই ছবিগুলো অপসারণ করে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে চিহ্নিত অপরাধীদের ছবি দিয়ে জুলাই উদযাপন করা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। আমরা জানি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষপাতদুষ্টতা রয়েছে এবং প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাস্তি নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে যা বিতর্কের ঊর্ধ্বে, তা হলো এই যুদ্ধাপরাধীদের একাত্তরের গণহত্যার দায়। কারণ, বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হলেই অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায় না।’

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘এ রকম একটি ঘটনা ৫ আগস্টের মতো দিনেই ঘটাতে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজের অদক্ষতা ও অক্ষমতা আরেকবার প্রমাণ করলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যেমন প্রশাসনের, একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের সম্মান রক্ষা করাও তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে তারা আবারও ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা গত বছরের আগস্ট থেকেই দেখছি, ক্যাম্পাসের ভেতরে তোফাজ্জল ও সাম্য হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা, চারুকলার ভেতরে ঢুকে শোভাযাত্রার মোটিফে আগুন দেওয়া, একাধিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আমলে না নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের প্রতি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যারা চব্বিশের নাম দিয়ে একাত্তরকে অবমূল্যায়নের চেষ্টা করে, তারা আসলে চব্বিশের শহিদদের আত্মত্যাগকেও ছোট করে ফেলে। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে বিতর্কিত করে তাকে ‘৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক ঘৃণ্য অপচেষ্টা শুরু করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। এর আগে তারা মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করে বিতর্কিত লেখা ছেপেছিল তাদের নিজস্ব প্রকাশনায়। ব্যাপক বিতর্কের মুখে তারা তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। আবারও একই লক্ষ্যে তারা যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শন করেছে বলে আমরা মনে করি। এই ছবিগুলো একাত্তরের লাখো শহিদের রক্তের প্রতি এবং আমাদের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের প্রতি চূড়ান্ত অসম্মান, যা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না।’

৫ দফা দাবি

১। ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তারা কখনই যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে না।

২। এই ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদের রক্তে রঞ্জিত এই ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি স্পষ্ট প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করতে হবে।

৩। এই ঘটনাটিসহ গত এক বছরে সংঘটিত একাধিক শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত ঘটনায় দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়া প্রক্টরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।

৪। ইন্টারনেট ব্যবহার করে নারীদের হয়রানি রোধ করতে যেসব সংগঠন বা গ্রুপ ও গ্রুপের সদস্য এ সকল কাজে সক্রিয়, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে এবং ছড়িয়ে দিতে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে স্মৃতি-চিরন্তনসহ যে-সকল স্থাপনা ও নিদর্শন মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের তালিকা ধারণ করে, সেসবের যথাযথ সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করতে হবে।

সারাবাংলা/কেকে/এইচআই

ছবি প্রদর্শনী ছাত্রশিবির ঢা‌বি দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক

বিজ্ঞাপন

ঢাকার বাতাসে স্বস্তি
১১ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর