Tuesday 12 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কবরে আর জেলে একাই যেতে হয়— কলিমুল্লাহকে আদালত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ আগস্ট ২০২৫ ২০:৪০

বেরোবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ

ঢাকা: শত ব্যস্ততায় ডুবে থাকলেও একটা সময় একাকী হয়ে পড়েন মানুষ। জীবনের কিছু গন্তব্যেও কারও সঙ্গ মেলে না। এ যেমন কবর কিংবা জেল। নিয়তির খেলায় এসব ঠিকানায় চাইলেই কাউকে ভাগীদার বানানো যায় না। গ্রেফতারের পর আদালতে বেরোবির সাবেক ভিসি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর উদ্দেশ্যে বিচারক বলেন- ‘কবরে আর জেলখানায় একাই যেতে হবে। আপাতত আপনাকে যেতে হবে কারাগারে।’

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলার শুনানির একপর্যায়ে কলিমুল্লাহকে এভাবে বলেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব। এদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিসিকে কারাগারে পাঠান আদালত।

বিজ্ঞাপন

এদিন সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় নিজ বাসা থেকে কলিমউল্লাহকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। বিকেলে তাকে আদালতে আনা হয়। পরে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মিনহজ বিন ইসলাম। তবে জামিন চান আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহনাজ আক্তার। শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

শুনানিতে শাহনাজ বলেন, ‘কোনো অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে কলিমুল্লাহ জড়িত নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বিধি মেনেই কাজ করেছেন। নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজও করেননি। তার এখন বয়স হয়েছে। সেই বিবেচনায় যেকোনো শর্তে জামিন দিলে পালিয়ে যাবেন না আমার মক্কেল।’

শুনানির একপর্যায়ে কলিমুল্লাহকে বিচারক বলেন, ‘আপনি কোন সালে ভিসি হয়েছেন।’ জবাবে কমিমুল্লাহ বলেন, ‘আমাকে ২০১৭ সালে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন সরকার।’

বিচারক ফের বলেন, ‘আপনি তো ফুলটাইম ঢাকায় থাকতেন।’ কলিমুল্লাহ বলেন, ‘না স্যার। আমি রংপুরেই থাকতাম। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন দীপু মনির অন্যায় আবদার রাখতে বাধ্য করতেন। সেই থেকে রাগান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে।’ তখন বিচারক বলেন, ‘আপনি ও আপনার মা একসঙ্গে কোনো নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন? তখন তিনি বলেন, ‘তিনি (তার মা) মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ডিজি ছিলেন। এজন্য নিয়োগ বোর্ডে সদস্য করে সরকার।’

বিচারক বলেন, ‘নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার এমনিতেও আপনার নেই। আপনি একইসঙ্গে ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ছিলেন। ঢাবিসহ অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ক্ষেত্রে এমন দেখিনি।’

কলিমুল্লাহ বলেন, ‘রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি একটু আলাদা। এর আগের ভিসিদের ক্ষেত্রেও এমন করা হয়েছে। ওই সময় বিচারক বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। তখন কলিমুল্লাহ বলেন, ‘না স্যার। আমি এসবের বিরুদ্ধে ছিলাম বলেই ষড়যন্ত্র করে আমাকে জড়ানো হয়েছে। এমনকি আমি চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করেছিলাম।’

তখন দুদকের আইনজীবী দেলোয়ার জাহান রুমি বলেন, ‘বেশিরভাগ সময়ই ঢাকায় থাকতেন কলিমুল্লাহ। নিয়মিত টকশো করতেন। কীভাবে ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করতেন।’ জবাবে কলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমি রাতের বেলা টকশো করতাম। ’

এ সময় আর কোনো মামলা আছে কিনা জানতে চান বিচারক। তখন অন্য কোনো মামলা নেই বলে জানায় দুদক। কলিমুল্লাহর উদ্দেশ্যে বিচারক বলেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, সেটা তদন্ত হলে পুরাটা বেরিয়ে আসবে।’ কলিমুল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো চিঠিপত্র পাইনি। আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হয়নি। সকালে বাসা থেকে পুলিশ নিয়ে এসেছে। এক পোশাকে একাই চলে এসেছি।’

তার এ কথার প্রেক্ষিতে বিচারক বলেন, ‘কবরে আর জেলখানায় একাই যেতে হয়। কবরে যেমন কেউ সঙ্গে যায় না, তেমনি জেলেও কেউ যায় না। আপাতত আপনাকে জেলে যেতে হবে। যারা দুর্নীতি করে তারা কবরেও একা, জেলখানায়ও একা যাবে। আপনি কী করেছেন তা একমাত্র আলিমুল গায়েবই জানেন আর আপনি জানেন। যতদিন জেলে থাকবেন, ভালো থাকবেন। তবে আপনি কারাবিধি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন। কোনো ওষুধপত্র প্রয়োজন হলে দেওয়া হবে।’

এর আগে, ১৮ জুন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

অন্য আসামিরা হলেন- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক একেএম নূর-উন-নবী, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আবদুস সালাম বাচ্চু ও এমএম হাবিবুর রহমান।

দুদক জানায়, পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন করেছেন আসামিরা। এ ছাড়া ৩০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের চুক্তি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সম্পাদন করেছেন। এ ছাড়া ঠিকাদারের সঙ্গে করা চুক্তিতে অগ্রিম টাকা দেওয়ার কোনো নিয়ম না থাকলেও আর্থিক সহায়তার কারণ দেখিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে অগ্রিম বিল দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বিল পরিশোধ হওয়ার আগেই ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড় করে দেওয়া হয়, যা নিয়মবহির্ভূত।

মামলার অভিযোগে দুদকে আরও উল্লেখ করে, প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নকশা না মেনে সরকারি ক্রয় বিধিমালা লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। সবশেষ দরপত্রে অস্বাভাবিক মূল্য প্রস্তাব (ফ্রন্ট লোডিং) থাকা সত্ত্বেও সরকারি ক্রয়বিধি (পিপিআর ২০০৮) অনুসারে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। এসব অভিযোগ এনে মামলা করে দুদক।

সারাবাংলা/আরএম/এইচআই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর