Tuesday 09 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা হয়েছে: গণফোরাম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ আগস্ট ২০২৫ ২২:০৩

সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমানসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা।

ঢাকা: জুলাই ঘোষণাপত্রে ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের দাবিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্রে ভবিষ্যত রাষ্ট্র ব্যবস্থার কোনো রূপরেখা স্থান পায়নি। জুলাই ঘোষণাপত্র একতরফা, পক্ষপাতদুষ্ট এবং ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা লক্ষণীয়। অন্যদিকে ৩৬ জুলাই উদযাপন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে, যা কাম্য নয়।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ১০ এপ্রিলের প্রোক্লেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্টের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। দীর্ঘ ৫৩ বছরে কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণয়ন পদ্ধতি নিয়ে কখনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী শক্তিই বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকে। অন্তর্বর্তী সরকার বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণয়ন পদ্ধতি এবং কাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্রে বিতর্ক সৃষ্টি করার কারণে মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র বাহাত্তরের সংবিধানকে দায়ী করে (মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী) সরকারগুলোর রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যর্থতাকে আড়াল করার হীন মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতাকে কোনোভাবেই সংবিধানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন সময় তার আলোচনা ও কাজে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে। নানাভাবে বিভক্তি তৈরি করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে জন আকাঙ্ক্ষা ছিল সংস্কার করে গণতান্ত্রিক চরিত্রে রাষ্ট্র ফিরে আসবে, কিন্তু সর্বশেষ জনআকাঙ্ক্ষার জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার এক ধরনের লুকোচুরি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সরবরাহ করা হয়েছে। ঘোষণাপত্র পড়ার দিন দুপুর ১২টায় শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদকের নামে একটি কার্ড দলীয় অফিসে পাঠানো হয়েছে। এটাও একটি বৈষম্যমূলক আচরণ। তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সেখানে গিয়েছি। সেখানেও অনেক বৈষম্য করা হয়েছে।’

মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে রাজনৈতিক শক্তি বা যে দল বা আমরা যে চেতনা ধারণ করি, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়ে তারা এই ঘোষণাপত্র দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন, পরিমার্জন করা যেতে পারে। কিন্তু বাহাত্তরের সংবিধানের প্রণয়ন পদ্ধতি নিয়ে যদি প্রশ্ন তোলা হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। স্বৈরাচার এরশাদের পতন কিংবা শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে যদি মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়, সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে জুলাই ঘোষণার মধ্যে বিতর্কিত বিষয় টেনে আনা হয়, তাহলে এটি পক্ষপাতদুষ্ট। এর পিছনে অনেক ধরনের অশুভ শক্তি কাজ করে।’

গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘অতীতে যারা শাসন ক্ষমতায় এসেছে, তারা সংবিধানকে অনুসরণ না করে অসাংবিধানিকভাবে দেশ পরিচালনা করেছে। রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা ছিল না, আইনের শাসন ছিল না, বিচারের নামে অনেক জায়গায় অবিচার করা হয়েছে। তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা ছিল, তাদের এই দায় নিতে হবে। সংবিধানের ওপর দোষ চাপানো যাবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সভাপতি পরিষদ সদস্য অ্যাড. এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, কোষাধ্যক্ষ শাহ নুরুজ্জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক অ্যাড. গোলাম মোস্তফা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক টি এইচ এম জাহাঙ্গীর, গবেষণা ও পরিকল্পনা সম্পাদক অ্যাড. সাইফুল ইসলাম, সমাজসেবা সম্পাদক ফারুক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা হাসান, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মজিবুর রহমান শিবলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এইচআই