Monday 11 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেরোবিতে কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত অভিযোগ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৭ আগস্ট ২০২৫ ২২:৩০ | আপডেট: ৯ আগস্ট ২০২৫ ০২:৫৯

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

রংপুর: কর্মস্থলে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ঢাকা ও দেশের বাইরে থেকে একাডেমিক-প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি, বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম করে স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতি, ভর্তি বাণিজ্য, মতের মিল না হলেই হয়রানি, নির্যাতন, নিপীড়ন ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ এমন কোনো অভিযোগ নেই যা তার ডায়েরিতে নেই। নিজেই প্রকল্পের নকশা পরিবর্তন করে নির্মাণব্যয় বাড়িয়েছেন ১৩০ ভাগ, নিজের মা’কে বানিয়েছেন নিয়োগ বোর্ডের এক্সপার্ট, যিনি নানা ধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বাজনপ্রীতি, ভর্তি বাণিজ্য চালিয়েছেন। বলছি একজন উপাচার্যের কথা। যাকে বলা হয়ে থাকে উপাচার্যদের উপাচার্য। নাম তার অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় নির্বাচক পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপ’র এই চেয়ারম্যান ২০১৭ সালের জুন থেকে ২০২১ মে পর্যন্ত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি মামলায় বৃহস্পতিবার আটক হন। পরে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ রয়েছে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন এমন কোনো অনৈতিক কাজ নেই যা তিনি করেননি; যার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম। এই অনিয়ম খুঁজতে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। সংস্থাটির তদন্তে উঠে আসে দুর্নীতির অবাক করা বিভিন্ন তথ্য। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনকে আসামি করে গত ১৮ জুন দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলেন তিনি।

কলিমুল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতির শ্বেতপত্র

অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। হয়রানি, নির্যাতন, নিপীড়ন ও স্বেচ্ছাচারিতার শিকার এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গড়ে তুলেছিলেন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ নামে একটি দুর্নীতিবিরোধী প্ল্যাটফর্ম।

তারা ২০২০ সালে মার্চে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ১১১টি অভিযোগ এনে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। তাদের দেওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিত থেকে ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে ব্যাপকভাবে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতি, হয়রানি আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ছিল, যা ওই শ্বেতপত্রে উল্লেখ করেছিলেন। এই শ্বেতপত্র যিনি সম্পাদনা করেছেন তিনি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হক।

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এসব দুর্নীতি করেছেন সংঘবদ্ধভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে এ সংঘবদ্ধ দুর্নীতির চক্র তৈরি করেছেন তিনি। সংঘবদ্ধ দুর্নীতির চক্রে যারা আছেন তারা উপাচার্যের দুর্নীতিতে সহায়তা করেন এবং উপাচার্যের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সব কমিটি, তদন্ত কমিটি, সিন্ডিকেটসহ কেনাকাটা সবকিছু করেন। এজন্য তিনি দুর্নীতির সহযোগীদের বিভিন্নভাবে পদোন্নতি ও পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যরাও জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে সংঘবদ্ধ দুর্নীতির সহায়ক হয়ে উঠেছিলেন।’

বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি

মামলায় প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণে প্রায় চার কোটি টাকার অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের অনুমোদিত নকশা উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া চুক্তি সম্পাদন, নিরাপত্তা জামানতের অর্থ দিয়ে ঠিকাদারকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা, ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই অগ্রিম বিল পরিশোধ এবং চার কোটি টাকা আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুস সালাম বাচ্চু ও এম এম হাবিবুর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশ, বিশ্বাসভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে’ বেরোবিতে উন্নয়ন প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন এবং ৩০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চুক্তি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই সম্পাদন করা হয়। এছাড়া, ঠিকাদারের চলতি বিল থেকে কাটা নিরাপত্তা জামানত এফডিআর (স্থায়ী আমানত) আকারে ব্যাংকে জমা রেখে, সেই এফডিআরকে লিয়েনে রেখে ঠিকাদারকে ঋণ দিতে ‘না-আপত্তি সনদ’ দেওয়া হয়—যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের প্রায় চার কোটি টাকা সরাসরি ঠিকাদারকে দিতে সহযোগিতা করা হয়।

ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার কোনো বিধান না থাকলেও, ‘আর্থিক সহযোগিতা’ দেখিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে অগ্রিম বিল দেওয়া হয়। সেই অগ্রিম বিলের বিপরীতে নেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো বিল সমন্বয়ের আগেই অবমুক্ত করা হয়। এ ছাড়া, প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নকশা ও পরিকল্পনা না মেনে সরকারি ক্রয়বিধির বাইরে গিয়ে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার দরপত্রে অস্বাভাবিক মূল্যদানের (ফ্রন্ট লোডিং) মত বিষয় থাকার পরেও, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর), ২০০৮ অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়ন না করেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

ধারাবাহিক অনুপস্থিতি

সারাবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, ড. কলিমুল্লাহকে রাষ্ট্রপতি ২০১৭ সালের ১৪ জুন সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিতির শর্তে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এখানে যোগ দেওয়ার পর ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেছেন। ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে নানাধরনের দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বাজনপ্রীতি ও ভর্তি বাণিজ্য চালিয়েছেন। উপাচার্য এসব দুর্নীতি করেন সংঘবদ্ধভাবে। তিনি এসবের মূল নায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির সব রেকর্ড ভেঙে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে দুর্নীতির এই চক্র তৈরি করেছেন তিনি।

নিয়োগ বাণিজ্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সংস্থা জানিপপের (জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ) সঙ্গে যুক্ত এবং কিছু কিছু অঞ্চলের প্রার্থীরা প্রাধান্য পান। এ ছাড়া, নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ও উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে রয়েছেন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এবং তার মা। দু’জনে মিলেই শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান উপাচার্য নিজেই ছিলেন, এমনকি ওই অনুষদের ডিন পদেও ছিলেন কলিমুল্লাহ। উপাচার্য হিসেবে তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি, অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, আবার বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তিনিই সদস্য। অন্যদিকে তার মা বিষয় ‘বিশেষজ্ঞ’ সদস্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনাকাটা ও ভবন নির্মাণে দুর্নীতি

অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ কেনাকাটাতেই সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। উপাচার্যের দুর্নীতি সহযোগী শিক্ষক-কর্মকর্তারাও সেসময় লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্য কলিমুল্লাহসহ কয়েকজন কর্মকর্তার নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ পায় ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট একটি ইট বিছানো রাস্তা নির্মাণ দেখিয়ে অন্তত ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়। রাস্তা নির্মাণের ওই কাজ করেন ফলের দোকানদার।

জানা গেছে, উপাচার্য হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি প্রায় তিনবছর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালকসহ একাই ১৬টি প্রশাসনিক পদে থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করেন।

শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে ড. কলিমুল্লাহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দমন করার জন্য কোনো তদন্ত ছাড়াই সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে অবৈধভবে শোকজ নোটিশ দেন, সতর্ক করেন। উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে সেসময় ১৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রেখেন। ভুক্তভোগীরা আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত থেকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়, তাও তিনি অমান্য করেন। লিয়াজোঁ অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজ করার নামে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ভুয়া বিলে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।

ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজে ইউজিসিও সেসময় দুর্নীতির প্রমাণ পায়। তিনি নিজেই নকশা পরিবর্তন করে নির্মাণব্যয় ১৩০ ভাগ বাড়িয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাকে সেসময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

সেসময় ইউজিসির তদন্ত কমিটির সদস্য ফেরদৌস জামান সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আমরা ফৌজদারি মামলারও সুপারিশ করেছি। তিনি একটি প্রকল্পের মোট তিনটি স্থাপনার নকশা নিজের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে খরচ ১৩০ ভাগ বাড়িয়েছেন। আগের পরামর্শক বাদ দিয়ে নিজের ভাগ্নেকে প্রকল্পের পরামর্শক বানিয়েছেনভ। হেন কোনো নয়-ছয় নেই যা তিনি এই প্রকল্প নিয়ে করেননি। এখন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ আগে। তার মধ্যে আছে ১০ তলা শেখ হাসিনা ছাত্রী হল, ড. ওয়াজেদ মিয়া গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১০ তলা ভবন, ‘স্বাধীনতা স্মারক’ নামে একটি শহিদ মিনার ও দু’টি ল্যাব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারপর উপাচার্য কলিমুল্লাহ একনেকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই নকশা পরিবর্তন ও পরামর্শক বাদ দিয়ে তার ভগ্নেকে পরামর্শক নিয়োগ করে কাজ চালান। ফেরদৌস জামান জানান, ‘মূল প্রকল্প ছিল ৯৭ কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকার। তিনি এটার ব্যয় বাড়িয়ে করেছেন ২১৩ কোটি টাকা।’

তবে প্রধান পরিবর্তন হলো টয়লেটের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা। ফলে যা হয়েছে তাতে নির্মাণের পর ভবন ধসে পড়তে পারতো বলে তদন্ত কমিটি মনে করে। তদন্ত কমিটি সরেজমিন গিয়ে কাজের অবস্থা দেখে এই প্রতিবেদন দেয়। তবে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ অন্তত দুইবার তদন্ত কমিটির তদন্ত বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কলিমুল্লাহর অন্যান্য দুর্নীতি

নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে আরও ৪৫ অভিযোগের তদন্ত করে ইউজিসির তদন্ত দল। এই অভিযোগগুলো প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতি। তার মধ্যে রয়েছে নিয়োগ, আপ্যায়ন ভাতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচে ঢাকায় থেকে সৈয়দপুর হয়ে রংপুর বিমানে আসা-যাওয়া করে ক্লাস নেওয়া, বিপুল খরচে ঢাকায় সিন্ডিকেট বৈঠক করা, ঢাকায় লিয়াঁজো অফিস করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় নিজের জন্য চাল-ডাল কেনা, নতুন শিক্ষকদের নির্ধারিত ড্রেস তার দোকান থেকে কিনতে বাধ্য করা, কর্মচারী ও শিক্ষকদের নামে গাড়ির বিল তোলা, নিজের মা-সহ নিজের পছন্দমতো লোকজনকে নিয়োগ কমিটিতে রাখা, পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়া, নিয়ম ভেঙে পছন্দের শিক্ষকদের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান করা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ, রংপুরে না থেকেও উপস্থিত দেখানো, ঢাকায় বসে অনলাইনে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া, তার পক্ষে কাজ করার জন্য অনৈতিক সুবিধা দিয়ে একটি গ্রুপ গঠন প্রভৃতি৷

এ ছাড়াও, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকায় অবস্থান করে তিনি তিন বছরে নানা ধরনের বিল নিয়েছেন ৪৫ লাখ টাকারও বেশি। তিনি উপাচার্য ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯টি দায়িত্ব কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। এসব দায়িত্বের বিপরীতে আবার আলাদা আলাদা ভাতা নিয়েছেন। এছাড়া আপ্যায়ন ভাতার নামে প্রচুর অর্থ তুলেছেন।

সে সময় ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছিলেন, আগের ভবনের আগের নকশা ছিল ত্রুটিপূর্ণ, তাই তিনি ঠিক করেছেন। সেখানে তিনি কোনো অনিয়ম করেননি বলেও দাবি তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে না থেকে বিল ভাতা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই।’

বেরোবির শিক্ষক মাহামুদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ও তার সংঘবদ্ধ সহযোগীরা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিলেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি, একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলাসহ বিদ্যমান সমস্যার আবর্ত থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা সচেতন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলাম। উপাচার্যের একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিষেবা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল।

তিনি বলেন, ‘শ্বেতপত্রে উল্লিখিত ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার সংঘবদ্ধ ঘটনাগুলোর বাইরেও আরও অনেক দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে, এমনকি প্রতিনিয়তই ঘটছে, যা গভীরতর অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উপাচার্য আমলের সব নিয়োগ, পদন্নোতি, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

সারাবাংলা/পিটিএম

দুদক দুর্নীতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় মামলা

বিজ্ঞাপন

ঢাকার বাতাসে স্বস্তি
১১ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর