গুল-জর্দায় করারোপে আবারও সনাতন পদ্ধতি, লাভবান হবে তামাক কোম্পানি
৪ জুলাই ২০১৮ ১৮:৩৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে, তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা।
বুধবার (৪ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রজ্ঞা জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে প্রচলিত এক্স-ফ্যাক্টরি মূল্যপ্রথা বাতিল করে খুচরা মূল্যের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হলেও চূড়ান্ত বাজেটে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর তামাক কোম্পানিগুলোর আয় বৃদ্ধি পাবে দ্বিগুণেরও বেশি।
প্রজ্ঞা জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা এবং গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে শতকরা ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। যার ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেত ১৬৮ শতাংশ। অথচ চূড়ান্ত বাজেটে খুচরা মূল্যের ওপর করারোপের সহজ পদ্ধতি থেকে সরে এসে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের জন্য যথাক্রমে ১২ টাকা এবং ৬ টাকা ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে এর ওপর ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এতে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ৫৪ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং একই পরিমাণ তামাক বিক্রি করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৮ শতাংশ বেশি আয় করবে।
উদাহরণ হিসেবে প্রজ্ঞা জানায়, প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, ২৫ টাকা খুচরা মূল্যে ১০ গ্রাম জর্দা বিক্রি করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো পেত ৫ দশমিক ২৪ টাকা অথচ চূড়ান্ত বাজেট অনুযায়ী, একই পরিমাণ জর্দা বিক্রয় করে কোম্পানিগুলো এখন পাবে ১২ টাকা—এই আয়বৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি। নিজেদের এই অস্বাভাবিক আয়বৃদ্ধির হার কিছুটা কমিয়ে হলেও তামাক কোম্পানিগুলো সস্তায় ভোক্তাদের হাতে তামাকপণ্য তুলে দিতে মরিয়া হবে।
কারণ, চূড়ান্ত বাজেটে সর্বনিম্ন খুচরা বিক্রয়মূল্য শর্ত প্রত্যাহার করায় তামাক কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। ফলে বাজারে জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য প্রত্যাশিত হারে নাও বাড়তে পারে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে জর্দা ও গুলের ব্যবহার প্রত্যাশিত হারে হ্রাস পাবে না, ফলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে না। এভাবেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভবান করা হয়েছে।
আবার অসংখ্য রেজিস্ট্রেশনবিহীন জর্দা ও গুল কারখানা থাকায় ঐসব কারখানা থেকে কর সংগ্রহ করা কঠিন। সুতরাং জর্দা ও গুলের উপর প্রযোজ্য কর আহরণের জন্যও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। এক্ষেত্রে করারোপে ট্যারিফ ভ্যালু পদ্ধতির পরিবর্তে বিড়ি সিগারেটের ন্যায় খুচরা মূল্য নির্ধারণ হবে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে এবং পাশাপাশি ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে তামাক কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ থেকে নীতিনির্ধারকদের সরে আসতে হবে বলে জানিয়েছে প্রজ্ঞা।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই