Tuesday 12 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্ত্রীকে খুনের পর লাশ ছুঁয়ে বলল— ‘ভুল করেছি, দায়-দাবি রাখিস না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ আগস্ট ২০২৫ ২০:০০ | আপডেট: ৯ আগস্ট ২০২৫ ২২:৩৫

স্ত্রীকে খুনের দায়ে গ্রেফতার মো. বেল্লাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাদক সেবনের টাকার জন্য নিয়মিত স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। শেষ পর্যন্ত ঝগড়ার মধ্যে স্ত্রীকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে মেরেই ফেলে। খুনের পর লাশ ছুঁয়ে স্বামী বলেন, ‘আমাকে মাফ করে দে, আমি ভুল করেছি, তুই আমার ওপর কোনো দায়-দাবি রাখিস না।’

শুক্রবার (৮ আগস্ট) গভীর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার মাইজপাড়া এলাকায় নিজ বাসায় এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবেশি ও স্বজনরা মিলে মো. বেল্লাল হোসেন (৪৫) নামে ওই ব্যক্তিকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। বেল্লালের বাড়ি ভোলা জেলায়। তবে স্ত্রী আছমা বেগম (৪১) ও একমাত্র ছেলে মো. হান্নানকে (১৭) নিয়ে নগরীর মাইজপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

বিজ্ঞাপন

একই এলাকার বাসিন্দা আছমার মামা মো. আনোয়ার জানান, আছমা পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। বেল্লাল সেফটিক ট্যাংক পরিষ্কারের কাজ করে। সে নিয়মিত ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করে। নেশার টাকার জন্য নিয়মিত স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করতো।

আছমার ছেলে হান্নানের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আছমা বেতন পেয়েছে। বেল্লাল বেতনের টাকাগুলো তার হাতে দেওয়ার জন্য বলে। কিন্তু আছমা দিতে না চাইলে তার সঙ্গে গত (শুক্রবার) রাতে ঝগড়া শুরু করে। তাকে মারধর করতে থাকে। হান্নান পাশের রুমে ছিল। এক পর্যায়ে সে তার মায়ের চিৎকার শুনতে পায়। সে ওই কক্ষে গিয়ে দেখতে পায়, তার বাবা হাতুড়ি নিয়ে তার মাকে মারছে। মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করার পর তার মা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে।’

তিনি জানান, তখন হান্নান গিয়ে তার বাবাকে ধরে ফেলে। তাকেও হাতুড়ি দিয়ে হাতে আঘাত করে ফেলে দেয় বেল্লাল। হান্নান উঠে বাসার দরজা খুলতে চাইলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। প্রতিবেশিদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি (আনোয়ার) সেখানে যান। বাসার জানালা দিয়ে দেখেন, আছমা মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন হান্নান দরজা খুলে দিলে তিনি ভেতরে ঢোকেন।

আনোয়ার আরও বলেন, ‘আমি ভেতরে ঢুকে দেখি জামাই আছমাকে ধরে বসে আছে। বলছে, আমাকে মাফ করে দে, আমি ভুল করেছি, তুই আমার ওপর কোনো দায়-দাবি রাখিস না। আমি একদিকে আছমাকে কাঁধে তুলে নিই, আবার জামাইকেও শক্ত করে ধরে রাখি। এলাকার লোকজন টেক্সি নিয়ে আসে। দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে আমি প্রথমে বিজিএমইএ হাসপাতাল ও সেখান থেকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে ডাক্তার জানায়, আছমা বাসাতেই মারা গেছে। কীভাবে মারা গেছে, সেটা আমি জানানোর পর হাসপাতালের লোকজন এবং সেখানে থাকা আমাদের এলাকার লোকজন মিলে বেল্লালকে আটক করে রাখে।’

বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফতাব আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নেশার টাকার জন্য ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি তিন-চারবার আঘাত করে খুন করেছে স্বামী। আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর