ঢাকা: তুরস্কে বসবাসকারী তরুণ শিক্ষাবিদ ড. মো. নাজমুল ইসলামকে মালদ্বীপে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি এই নিয়োগ পেলেন। এটি দেশের ইতিহাসে প্রথম। এই নিয়োগকে ঘিরে চলছে আলোচনা।
গত ২৭ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম সই করা এক প্রজ্ঞাপনে ড. নাজমুল ইসলামকে মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাই কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তাকে অন্য যে কোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। এরপর গত ৩ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আবুল হাসান মৃধার সই করা অফিস আদেশে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ন্যস্ত করে মালেতে হাই কমিশনার হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
তরুণ শিক্ষাবিদ ড. নাজমুল ইসলাম নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর তুরস্ক সরকারের বৃত্তি নিয়ে আঙ্কারা ইলদিরিম বেয়াজিট বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করে সেখানেই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তুরস্কে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি দেশটির পার্লামেন্টে ফরেন রিলেশন্স অ্যান্ড প্রটোকল ডিপার্টমেন্টে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। শত বছরের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি হিসেবে তার এই নিয়োগ ছিল একটি বিরল সম্মান। এর বাইরে ড. নাজমুল ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এস্টেটের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের সাউথ এশিয়ায় নিয়োগ পান। সেখানে তিনি গেস্ট লেকচারার হিসেবে অধ্যাপনা করছেন।
এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘ, ওআইসি এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
রাষ্ট্রদূত হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স কত হবে— এর কোনো লিখিত বিধান নেই। বাংলাদেশে না হলেও নাজমুল ইসলামের বয়সে বা তার চেয়ে কিছু বেশি বয়সে রাষ্ট্রদূত হওয়ার উদাহরণ পৃথিবীতে আছে। তবে, যাকে রাষ্ট্রদূতের মতো দায়িত্বশীল দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তিনি এর ভার বহন করার যোগ্যতা রাখেন কি না— সেটাই দেখার বিষয়।
আঙ্কারার সূত্র জানায়, পড়াশোনা ও চাকরির সুবাদে প্রায় এক যুগ তুরস্কে আছেন নাজমুল ইসলাম। তিনি তুরস্কে বিয়েও করেছেন। তার স্ত্রী জন্মসূত্রে তুর্কি এবং সেখানে সরকারি চাকরিও করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত বিশেষ বিবেচনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মান বা অনেক ক্ষেত্রে পুরস্কার হিসেবে দূত হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে, রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ইতিহাসে এত কম বয়সী রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার করার নজির নেই। আর পেশাদার কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে প্রশ্নই আসে না। নাজমুলের বয়সী পেশাদার কূটনীতিকেরা সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার হয়ে থাকেন। পেশাদার কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে গ্রেড থ্রি পদে মহাপরিচালক/কনসাল জেনারেল/মিনিস্টার পদে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।