ঢাকা: বিচার বিভাগের প্রতিষ্ঠানগত স্বাধীনতার দাবি কোনোভাবেই একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা মানে হলো রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা, আধিপত্য বিস্তার নয়। এজন্য একটি স্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা জরুরি, যা বিচার বিভাগের কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছ-জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর করবে। যারা এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন, তাদের এ আশঙ্কা ভিত্তিহীন।’
রোববার (১০ আগস্ট) প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘সেলিব্রেটিং দ্য লাইফ অ্যান্ড লিগেসি অব এ জে মোহাম্মদ আলী’ শিরোনামে এ আয়োজন করে এ জে মোহাম্মদ আলী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস্।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের সাংবিধানিক ইতিহাসে এমন কোনও উদাহরণ নেই, যেখানে বিচার বিভাগ এককভাবে রাষ্ট্রের ওপর কর্তৃত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। বরং অতীতে এমন কিছু সময় এসেছে, যখন দুর্বল ও নমনীয় বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর সমঝোতায় গিয়েছিল। এই সময়গুলোতে সাংবিধানিক সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে, যা মূলত একটি অনৈতিক জোটের ফল ছিল।’
সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন সচিবালয় গঠনের প্রসঙ্গটি বিচার বিভাগের দীর্ঘদিনের দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে চলা বিতর্ককে রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যের আলোকে দেখতে হবে। গত ৫০ বছরে মর্যাদা ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ সব সময় নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগের তুলনায় পিছিয়ে থেকেছে। যদিও অনেক সময়ে বিচার বিভাগই ছিল রাষ্ট্রের একমাত্র কার্যকর অঙ্গ। এরপরও কখনও তারা রাষ্ট্রের প্রধান বা প্রভাবশালী অঙ্গ হয়ে ওঠেনি।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিচার বিভাগকে শক্তিশালী, স্বাধীন এবং মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। তবে এজন্য অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অঙ্গের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রয়োজন নেই।’
যুক্তরাজ্যের ২০০৫ সালের কনস্টিটিউশনাল রিফর্ম অ্যাক্টের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি মডেল, যা ক্ষমতার পৃথকীকরণ নিশ্চিত করেছে। কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতাও বজায় রেখেছে।’
হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. শরীফ উদ্দিন চাকলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামামন।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ।