Friday 12 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কার হাতে উঠবে নওগাঁ বিএনপির নেতৃত্ব? ভোটের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারণ আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ আগস্ট ২০২৫ ১০:০৯ | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৫ ১২:৩৬

নওগাঁ: দীর্ঘ ১৫ বছর পর নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১০ সালে। দীর্ঘদিন পর হতে যাওয়া এই সম্মেলনকে ঘিরে দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কার হাতে উঠবে নওগাঁ বিএনপির নেতৃত্ব? ভোটের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জেলা বিএনপির সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সম্মেলন করা সম্ভব না হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে এর আয়োজন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পুরো শহর সেজে উঠেছে নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশী নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরণের শিকার হয়েও এতদিন যাঁরা হতাশ ছিলেন, এই সম্মেলন তাদের মনে নতুন আশা জাগিয়েছে। কর্মীরাও আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন, কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে।

দলের নেতাকর্মীরা আশা করছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে এমন নতুন নেতৃত্ব আসবে, যারা দলের দুর্দিনে ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা হবে। তারা আরও মনে করেন, নতুন এই নেতৃত্ব দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সোমবার নওগাঁ কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।

দলীয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল, যেখানে ভোটের মাধ্যমে শামসুজ্জোহা খান সভাপতি, জাহিদুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক এবং মামুনুর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

ওই কমিটি ২০১৫ সালে বিলুপ্ত হওয়ার পর আর কোনো সম্মেলন হয়নি। বর্তমানে ২০২২ সালে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে দলের কার্যক্রম চলছে। গত ২৪ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বৈঠকের পর ১১ আগস্ট সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়।

এই ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীরা নতুন করে সক্রিয় হয়েছেন। পদপ্রত্যাশী নেতারা বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের প্রচারের পাশাপাশি দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। দীর্ঘদিন পর সম্মেলনকে ঘিরে দলে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

নওগাঁ জেলা বিএনপির সভাপতি পদে মোট আটজন নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই পদে লড়ছেন দলের সাবেক ও বর্তমান বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা হলেন— জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু ও মাস্টার হাফিজুর রহমান। এছাড়াও রয়েছেন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন, পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবদুস শুকুর, জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এস এম মামুনুর রহমান ও সাবেক সদস্য এ বি এম আমিনুর রহমান।

সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। তারা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও আমিনুল হক বেলাল।

সাংগঠনিক সম্পাদকের দুটি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আটজন। তারা হলেন- শফিউল আজম (ভিপি) রানা, নূর-ই আলম, ফরিদুজ্জামান, খায়রুল আলম, শবনম মোস্তারী, সুলতান মামুনুর রশিদ, কামরুজ্জামান কামাল ও জহুরুল হক।

কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জেলার ১৪টি ইউনিটের ১ হাজার ৪১৪ ভোটার গোপন ব্যালটে জেলা বিএনপির নেতা নির্বাচন করবেন।

সভাপতি প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। সর্বশেষ দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে আমি ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলাম। এবারও আমি আশাবাদী, কাউন্সিলররা ভোটের মাধ্যমে আমাকে বিজয়ী করবেন।’

আরেক সভাপতি প্রার্থী নজমুল হক বলেন, ‘বিএনপি যে একটি গণতান্ত্রিক দল, এই নির্বাচনই তার প্রমাণ। নেতা-কর্মীরা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে প্রতিকূল পরিবেশেও আমি তিনবার নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। সবসময় দলের নেতা–কর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’

সভাপতি প্রার্থী আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু বলেন, ‘ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনে হারজিত মেনেই আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আশা করি, জয়ী–পরাজিত সবাইকে নিয়েই চলতে হবে।’

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মামুনুর রহমান রিপন বলেন, ‘জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা চান নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক। সেই জায়গা থেকে তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন। আশা করছেন, কাউন্সিলররা দলের প্রতি প্রার্থীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা বিবেচনা করে তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন।’

আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বায়েজিদ হোসেন বলেন, ‘সদস্য সচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর নওগাঁ জেলা বিএনপিকে একটি শক্তিশালী ইউনিটে পরিণত করেছি। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব কমিটি গণতান্ত্রিক উপায়ে গঠন করা হয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং বিগত হাসিনা শাসনামলে জেল জুলুমের ইতিহাস বিবেচনা করে আশা করি সম্মানিত কাউন্সিলররা আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করবেন।’

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রেজাউল করিম বাদশা জানান, সম্মেলনে নেতা নির্বাচনে তিনটি পদে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়াও, দলের স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। তিনি আরও জানান, সম্মেলন সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এসআর
বিজ্ঞাপন

আরো