বগুড়া: বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনকে লক্ষ্য করে গণশুনানির সময় জুতা নিক্ষেপ করেছেন এক ভুক্তভোগী। রোববার (১০ আগস্ট) সকাল পৌনে ১১টার দিকে শহীদ টিটু মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।
দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ জানানোর সিরিয়াল না পেয়ে সোনাতলা উপজেলার ছাকোয়াত হোসেন মণ্ডল নামের ওই ব্যক্তি এ কাজ করেন। পরে তাৎক্ষনিক তাকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর তাকে আবারও অনুষ্ঠানে বসতে দেয়া হয় এবং বলা হয় তাকে মঞ্চে ডেকে তার অভিযোগ শোনা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে আর মঞ্চে ডাকা হয়নি।
কি কারণে ছাকোয়াত হোসেন জুতা ছুড়লেন জানতে চাইলে ছাকোয়াত হোসেন বলেন, ‘আজকের গণশুনানীতে আমার অভিযোগটা জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনভাবেই কথা বলার সিরিয়াল পাচ্ছিলাম না। তাই জুতা মেরেছি। যাতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কথা বলার সুযোগ পাই। এতে আমার যে শাস্তি হয় হবে। কথা বলার সুযোগ না পেলে জুতা মারতে পেরেছি এটাই আমার তৃপ্তি হবে। এমন চিন্তা থেকেই জুতা মেরেছি।’
কি অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ছাকোয়াত হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘আমি পেশায় একজন মাছ খামারি। বিভিন্ন জায়গায় পুকুর ও বিল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। কুড়িগ্রামে ১৪ বছর, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬ বছর মাছ চাষ করেছি। ২০১২ সালে সোনাতলার গারামারা গ্রামের তিনটি বিল ও তিনটি পুকুর বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে ২১ লাখ টাকা খরচ করে মাছ চাষ শুরু করি। তখন আমার পুকুর ও বিলে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মণ মাছ হয়েছিল।’
‘তৎকালীন সোনাতলা-সারিয়াকান্দি আসনের এমপি তার শ্যালক লিটনকে শালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির ভোট ব্যবস্থা বাদ দিয়ে সভাপতি বানাতে চেয়েছিলেন। চারটি গ্রামের মানুষ এতে আপত্তি জানিয়েছিল, কিন্তু এমপির সামনে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি—আমি ছাড়া। আমি বলেছিলাম, শালিকা গ্রাম থেকে কেউ সভাপতি হোক, কিন্তু এমপি বা তার শ্যালক হলে তা আমাদের কাছে ভালো লাগবে না। এটাই ছিল আমার অপরাধ।’
‘এই অপরাধে এমপির শ্যালক ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার দিয়ে ২০১৫ সালের ১৭ মে আমার মাছের খামার দখল করে নেয়। এরপর থেকে জেলা পর্যায়ে থানায়, এসপি, ডিসি মহোদয়ের কাছে এবং ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। গত জুলাই অভ্যুত্থানের পর বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের আরও কয়েকটি দপ্তরেও অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। সব জায়গা থেকেই অসহযোগিতা পেয়েছি। এ কারণেই আমার ভেতরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
দুদকের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন অনুষ্ঠানে জুতা নিক্ষেপ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জুতা নিক্ষেপের ঘটনা কোথায় ঘটেছে? আমি তো এমন কিছু শুনিনি। সাংবাদিকের কাজ হলো তথ্য নিশ্চিত হওয়া। আপনি সাংবাদিকই যদি এ ধরনের কথা বলেন, সাংবাদিকই যদি প্ররোচনা দেন, তাহলে কী হবে?’
একুশে টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ছাকোয়াত হোসেন আমার পাশেই ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি দুটো কালো জুতা নিক্ষেপ করেন। এরপর দুদকের লোকজন তাকে হল থেকে বের করে দেয়। পরে আবারও তাকে ভেতরে বসতে দেয়। ঘটনাটি আমি নিজে দেখেছি।’
গণশুনানিতে সরকারি-বেসরকারি ৩২টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৯৭টি অভিযোগ জমা পড়ে; এর মধ্যে ৫৭টির শুনানি হয়। কয়েকটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদক চেয়ারম্যান সংস্থার অভ্যন্তরেও দুর্নীতি আছে বলে মন্তব্য করেন এবং জনগণের সহযোগিতায় তা সমাধানের আশ্বাস দেন।