ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলে পুরো আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে। সেইসঙ্গে আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে অন্তর্ভুক্ত এবং একক প্রার্থী থাকলে সেই আসনে ‘না ভোট’সহ একগুচ্ছ সংশোধন এনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অধ্যাদেশ-২০২৫ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সোমবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সন্ধ্যায় মুলতবি থাকা কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অ.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে একটি, দু’টি কেন্দ্র অথবা পুরো আসনের ফলাফল কমিশন চাইলে বাতিল করতে পারবে।’ এ ছাড়া, ফলাফল ঘোষণার সময় সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘হলফনামায় দেওয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হলে নির্বাচিত হওয়ার পরেও পাঁচ বছর মেয়াদ পর্যন্ত কমিশন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। এমনকি সদস্যপদ বাতিলও করতে পারবে ইসি।’
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত অনুদান নিতে পারবেন প্রার্থীরা। তবে সেটা হতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে।’ জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও দলীয় প্রতীকে প্রার্থীদের ভোট করতে হবে বলে জানান তিনি।
ইসি সানাউল্লাহ, ছোট দলগুলো জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও এখন থেকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। কেউ এককভাবে নাকি দলীয়ভাবে নির্বাচন করবে, নাকি জোটবদ্ধভাবে করবে- সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাধীনতা। যে প্রস্তাব সংস্কার কমিশন দিয়েছে, সেটি কমিশনও গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও জানান, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব সংরক্ষিত প্রতীক ব্যবহার করবে। অন্য কোনো একক প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করবে না।

বৈঠক শেষে কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অ.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। ছবি: সারাবাংলা
এআই’র অপব্যবহার রোধ ও ভুয়া তথ্য (মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন) শনাক্ত এবং নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে জানতে তিনি বলেন, ‘এটা একটি বৈশ্বিক সমস্যা, শুধু বাংলাদেশের নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে কমিশনের পক্ষ থেকে পৃথিবীর অন্তত ২০টি ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডির সঙ্গে বৈঠক করেছি। সবারই একই উদ্বেগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে কৌশল নিয়ে কাজ করছি, গতকাল আইএফএস আমাদের একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। আমরা একটি স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছি, কীভাবে ভালো তথ্য দিয়ে খারাপ তথ্যকে দুর্বল করা যায়। কারণ, আপনি খারাপ তথ্য পুরোপুরি থামাতে পারবেন না। পৃথিবীজুড়ে স্বাভাবিকভাবে মাত্র ৫০ শতাংশ উৎস ট্রেস করা যায়। দেশের ভেতর থেকে যাকে ট্রেস করতে পারব না, তাকে আইনের আওতায় এনে জবাবদিহিতায় আনা সম্ভব নয়। তখন উপায় থাকে দুটো— একটি হলো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া, অন্যটি হলো ভালো তথ্য দিয়ে খারাপ তথ্যকে পরাস্ত করা।’
গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সহায়তা আমাদের ভীষণভাবে প্রয়োজন। আমরাও কৌশল প্রণয়ন করছি।’ সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচনে গণমাধ্যমে যারা যুক্ত তারা কীভাবে ভোট দেবেন সে প্রক্রিয়া ঠিক করতে আগামী সপ্তাহে গণমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কমিশন।
এর আগে, বেলা ১১ টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভা শুরু হয়। চার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।