চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে পাইকারি আড়তে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। এতে খুচরায়ও পেঁয়াজের দাম অস্থির হয়ে উঠেছে। আড়তদাররা বলছেন, বর্তমানে পেঁয়াজের আমদানি বিশেষ করে ভারত থেকে আসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে বাজার হয়ে পড়েছে পুরোপুরি দেশীয় পেঁয়াজনির্ভর। চলমান বর্ষায় উৎপাদন পর্যায়ের মোকাম থেকে পরিবহণ সংকটসহ নানা কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। তবে দেশীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা অব্যাহত থাকলে অর্থাৎ আমদানি শুরু না হলে দাম আরও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের বিভিন্ন আড়তে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮৭ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮১ থেকে ৮৭ টাকায়। গত সপ্তাহেও এসব পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকার মধ্যে ছিল। আড়তদাররা জানিয়েছেন, আড়তে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। কারও কারও কাছে দু’য়েক টন থাকলেও সেগুলো কেজিপ্রতি ৯০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বৃহত্তর পাইকারি মার্কেট হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি হয়েছে। মোকাম থেকে আমাদের আড়তে পেঁয়াজ সেভাবে আসতে পারেনি। আমদানিও বন্ধ। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ অনেক কম। এ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয় এবং মোকাম থেকে সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়, তাহলে দাম কমতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে শুধু মোকামের দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করে থাকলেও দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, কৃষকের সংরক্ষণ করা পেঁয়াজ দিয়ে বড়জোড় এক-দুই মাস চলবে। এর পর অবশ্য নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করলে দাম কমবে।’

খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৯০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা
আড়তদাররা জানান, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সাধারণত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ আসে। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির কারণে একদিকে যেমন পরিবহণ সংকট, তেমনি মোকাম থেকে বিক্রিও কমে যায়। বাড়তি পরিবহণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে আড়তদারদের। এতে এক সপ্তাহ ধরে আড়তদারদের কেজিপ্রতি ১০-১২ টাকা বেশি দরে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
বৃহত্তর চাক্তাই আড়তদার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফোরকান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের পেঁয়াজ দিয়ে পুরোপুরি চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ভারতের মহারাষ্ট্র, কেরালার পেঁয়াজ দিয়েই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে মূল ব্যবসা চলে। এখন আমদানি বন্ধ হওয়ায় দেশি পেঁয়াজ দিয়ে অনেকটা একহাতের ব্যবসা চলছে। আর একহাতের ব্যবসা হলে তো ক্রাইসিস তৈরি করা সহজ। সুতরাং, এই মুহূর্তে দাম কমাতে হলে পেঁয়াজ আমদানির কোনো বিকল্প নেই।’
এদিকে আড়ত থেকে পাইকারি পর্যায়ে দাম বেড়ে যাবার প্রভাব পড়েছে খুচরায়ও। বিক্রেতারা জানালেন, গত ৩১ জুলাই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫৫ টাকা। একদিনের ব্যবধানে ১ আগস্ট কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হয় ৬০ টাকা। ৮ আগস্ট বিক্রি হয় ৮৫ টাকায়। রোববার বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। সোমবার বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৯০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা
নগরীর মোমিন রোডের শরীফ স্টোরে বড় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। একই দোকানের সামনে সড়কে ভ্যানগাড়িতে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ছোট পেঁয়াজ। আবার নগরীর আসকারদিঘীর পাড়ে বিভিন্ন মুদি দোকানে ছোট-বড় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
আসকার দিঘীর পাড়ের রাজীব স্টোরের মালিক রিপু নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে ভারতীয় কোনো পেঁয়াজ কয়েক মাস ধরে নেই। দেশি পেঁয়াজই শুধু বিক্রি করছি। গত সপ্তাহেও ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছি। এখন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, আরও ভালো মানেরগুলো ৯৫-৯৬ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আজ (সোমবার) থেকে না কি আড়তে দাম আরও বেড়েছে। সেগুলো বাজারে এলে দু’য়েকদিনের মধ্যে আমাদের হয়তো প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে হবে।’
খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। কিন্তু বৃষ্টি হলেই সরবরাহ সংকটের অজুহাতে তারা বিক্রি কমিয়ে দেয়। এতে বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। প্রশাসন তদারকি শুরু করলে লাগাম টেনে ধরা সম্ভব বলে মনে করছেন খুচরা বিক্রেতারা।