Wednesday 13 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতীয় পরিচয়পত্র
স্কুল-কলেজে পাঠ অন্তর্ভুক্তির চেয়ে প্রচার-সচেতনতা জরুরি!

নাজনীন লাকী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ আগস্ট ২০২৫ ১০:০৩

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: রংপুরের জমিলা আক্তার। নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম আর বয়স ভুলের কারণে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনে ঘুরছেন। নিজ জেলা থেকে আবেদন করলেও কোনো কাজ হয়নি। অবশেষ ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে এসে গত তিন মাস ধরে ঘুরছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এনআইডির তথ্যের ভুল সংশোধন করতে পারেননি জমিলা।

জমিলার মতো আরেক ভুক্তভোগী ইসতিয়াক আহমেদ। তিনিও নামের ভুল সংশোধনের জন্য বার বার আবেদন করছেন। কিন্তু তার প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি। তাই তিনি নির্বাচন কমিশনেই এসেছেন এনআইডিতে নিজের নামের ভুল সংশোধনের জন্য। আর জানতে এসেছেন, কীভাবে সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আবেদন করতে হয়।

বিজ্ঞাপন

জমিলা বা ইসতিয়াক আহমেদের মতো অনেকেই এনআইডি’র তথ্যের ভুল সংশোধনের জন্য দিনের পর দিন ঘুরছেন। অনেকে আবার আবেদনটিও ঠিক মতো করতে পারছেন না। কারও আবার এ বিষয়ে ধারণাই নেই। তাই নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন, ব্যবহার, ভোটার তালিকাভুক্তি, ভুল সংশোধনের প্রক্রিয়া সবার মাঝে সহজে ছড়িয়ে দিতে বিষটি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি চায় ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।

পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি কেন জরুরি

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা চাইছি, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্ব বিষয়টি অন্তুর্ভুক্তি করতে। এ লক্ষ্যে লেখা আহ্বানের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৩১ আগস্টের মধ্যে কমিটি ইসি সচিবালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।’

তিনি জানান, প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইসি সচিব সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করবেন। ইসির অনুমোদন পেলে তা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও পরিচয়ের দলিল। বর্তমান প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কিত সচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। এটি শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়বস্তুর ওপর গল্প, সংলাপ, নাটিকা, প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা সহজেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাবে এবং বাস্তবজ্ঞান অর্জনে সক্ষম হবে।’

এনআইডিবিষয়ক লেখা আহ্বান

দেশের সব নাগরিক এই সুফল পাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কেননা এনআইডি ব্যবহার আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও এনআইডি ছাড়া সরকারি-বেসরকারি খাতের সেবা পাওয়া যায় না। তাই এই উদ্যোগের জন্য এরই মধ্যে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্ব প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লেখা আহ্বান করা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রয়োজনে লেখক, কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার ও গবেষকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে লেখা আহ্বান বিবেচনায় রাখা হয়েছে। আর এসব বিষয়ে কমিটিকে ৩১ অাগস্টের মধ্যে সিনিয়র সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম এই উদ্যোগকে সময়োযোগী বলে উল্লেখ করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ইসির পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন না। সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘আধুনিক এই যুগে প্রযুক্তির সহায়তায় আমরা সবকিছুকেই মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারি। সেখানে কোমলমতি শিশুদের সামনে কেন এইটা পড়ার জন্য যুক্ত করতে হবে।’

প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইসিকে সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ছোট ছোট নাটিকা বা গল্প আকারে প্রতিবেদন তৈরি করে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। সেইসঙ্গে গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে দিতে হবে। এসব পদক্ষেপ নিলে খুব কম সময়ের মধ্যে সবার মাঝে সচেতনতা বাড়ানো যাবে। আর এনআইডি সমস্যা সমাধানে জরুরি হেল্প ডেস্ক বা অনলাইন নম্বর যুক্ত করা উচিত।’ এতে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনেক নাগরিকই ভোটার তালিকা ও এনআইডি’র বিষয়ে জানেন না, অথবা জানায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আগামীতে যারা এনআইডি পাবেন ও ভোটার তালিকাভুক্ত হবেন, পাঠ্যপুস্তকে শ্রেণি ভেদে এ নিয়ে পাঠ থাকলে শিক্ষার্থী ও নাগরিকরাই উপকৃত হবেন।’

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৬ সালে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে নির্বাচনি তথ্যবিষয়ক অধ্যায় রাখার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আলোর মুখ দেখেনি। তবে এবার এনআইডি ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব পাঠ্যপুস্তকে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার পালা বাস্তবায়ন হয় কি না। তবে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন- এনআইডি’র ভোগান্তি কমাতে ব্যাপক প্রচার ও সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সারাবাংলা/এনএল/পিটিএম

অন্তর্ভুক্তি এনআইডি জাতীয় পরিচয়পত্র পাঠ্যপুস্তক