Monday 11 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্দোলনকারীদের বিষয়ে ঢাবি ভিসিকে শেখ হাসিনা
‘রাজাকার ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ আগস্ট ২০২৫ ২৩:৫০

ঢাবির তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ১৪ জুলাই ২০২৪। এদিন রাত থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। ‘রাজাকার’ স্লোগানে কম্পিত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাদের সুরে তাল মেলান অন্য সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। আর সেদিন রাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ঢাবির তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামালের দীর্ঘ ফোনালাপ হয়। কথপোকথনের এক মুহূর্তে শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের বিষয়ে বলে ওঠেন- ‘রাজাকার ফাঁসি দিয়েছি, এবার তোদেরও ছাড়ব না’।

সেদিনের এই কথপোকথনটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। রাজধানীর চানখারপুলে সংঘটিত ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সূচনা বক্তব্যে তিনি এ ফোনালাপের রেকর্ডটি সামনে আনেন।

বিজ্ঞাপন

চব্বিশের ১৪ জুলাই রাত ১১টা ২৮ মিনিটে শেখ হাসিনাকে ফোন করেন ভিসি মাকসুদ কামাল। ফোনে নিজের বাসার সামনের পরিস্থিতির কথা বলেন। শুরুতেই সালাম বিনিময়। যেকোনো মুহূর্তে নিজের বাসায় কিছু একটা ঘটার শঙ্কা জানান। একইসঙ্গে বলা হয় ‘তারা রাজাকার হতে চায়’। জবাবে ফোনের ওপার থেকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজাকার ফাঁসি দিয়েছি। এবার তোদেরও (আন্দোলনকারীদের) ছাড়ব না। এত বাড়াবাড়ি ভালো না।’

ভিসি কামাল বলেন, ‘সন্ধ্যা থেকেই ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক ইনান আমার বাসায় ছিল। তারা কিছুক্ষণ আগে গেল।’ ফের রাজাকার সম্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজাকারের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, সবগুলোকে ফাঁসি দিছি। এবার তোদেরও ছাড়ব না। সহনশীলতা দেখিয়ে এতদূর নিয়ে এসেছি। তারা রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই।’

মাকসুদ কামালের উদ্দেশে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইংল্যান্ডে ছাত্ররাজনীতির জন্য কয়েকজনকে গুলি করে মেরে ফেলেছিল। ওইরকম অ্যাকশন নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

সূচনা বক্তব্যে বেতার বার্তায় দেওয়া ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর। যেখানে সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দেন সাবেক এই কমিশনার।

এদিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে এজলাসে ওঠেন তিন বিচারপতির প্যানেল। এরপর সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথম সাক্ষী হিসেবে ডায়াসে ওঠেন আনাসের বাবা শাহরিয়ার খান পলাশ। শপথ পড়ানোর পর তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। একইসঙ্গে তার ছেলে আনাসসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অন্য সব হতাহতদের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ফাঁসি চান।

পলাশের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে কিছু সময় মুলতবি বা বিরতি দেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে জেরা শুরু হয়। এর মধ্যে আরশাদের পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি। সুজন ও নাসিরুলের পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী আবুল হোসেন ও ইমাজ হোসেন ইমনের পক্ষে আইনজীবী মো. জিয়াউর রশিদ জেরা করেন। সবশেষ পলাতক চার আসামির পক্ষে সাক্ষী পলাশকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী কুতুবউদ্দিন।

এদিন সকালে কারাগার থেকে চার আসামিকে প্রিজনভ্যানে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ‍ও মো. নাসিরুল ইসলাম।

এর আগে, ১৪ জুলাই এ মামলায় পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। চার্জ গঠন শেষে এ মামলার সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য যথাক্রমে ১০-১১ আগস্ট দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ৩ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির অভিযোগ গঠন নিয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়। সেদিন আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সিফাত মাহমুদ শুভ। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম।

এছাড়া পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও ট্রাইব্যুনালে হাজির হননি সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চারজন। বাকিরা হলেন- ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

গত ২৯ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়। তবে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন শুনানির জন্য সময় চান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

গত ৩ জুন পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ মে এ মামলায় আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই দিন পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

উপাচার্য ছাড়ব না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোদেরকেও ফাঁসি রাজাকার শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর