ঢাকা: জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত সাভারে আসহাবুল ইয়ামিন হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৫ আসামির বিরুদ্ধে আগামী এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও এক মাস সময় চান তিনি। শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করে নতুন দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। তবে নির্ধারিত তারিখের আগেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন।
এ মামলায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন পুলিশ। বাকিরা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের। এছাড়া গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন সাতজন। বাকি আটজন এখনও পলাতক রয়েছেন।
এদিন সকালে এ মামলার সাত আসামিকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। এর আগে, ১৪ জুলাই সাভারের ইয়ামিন হত্যা মামলাটির শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে আসামিদের আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই দিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এর মধ্যে অন্য মামলায় গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যুর জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন প্রসিকিউটর রেজা। শুনানি শেষে প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত।
নিহত আসহাবুল ইয়ামিন এমআইএসটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৮ জুলাই সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালান পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ইয়ামিনকে ধরে টেনে পুলিশের সাঁজোয়া যানের কাছে নিয়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে বুকের বাঁ পাশে গুলি করেন তারা। গুলিতে তার বুকের বাঁ পাশে অসংখ্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়।
একপর্যায়ে ইয়ামিনকে টেনে সাঁজোয়া যানের ওপরে ফেলে রেখে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য গাড়িটি এপাশ থেকে ওপাশ প্রদক্ষিণ করতে থাকেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। প্রায় মৃত অবস্থায় তাকে রাস্তায় ফেলে দেন। একই সঙ্গে সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে একজন পুলিশ সদস্যকে বের করে তার পায়ে পুনরায় গুলির নির্দেশ দেন। ওই পুলিশ সদস্য ইয়ামিনকে মৃত ভেবে পায়ে গুলি না করে রাস্তার ওপরের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে টেনে নিয়ে রোড ডিভাইডারের পাশে ফেলে দেন।
গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে তখনও নিশ্বাস নিতে দেখা যায়। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।