ঢাকা: নাম রহিমা আক্তার। বয়স ৫৪ বছর। রাজধানীর নিউমার্কেটে একটি প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করতেন তার ছেলে মো. ইয়াকুব। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চব্বিশের ৫ আগস্ট শহিদ হন তিনি। ছেলেকে হারিয়ে অনেকটা পাগলপ্রায় মা। তবু ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে আসেন তিনি।
রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চার নম্বর সাক্ষী হিসেবে নিজের জবানবন্দি দেন রহিমা। বুধবার (১৩ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
রহিমা বলেন, ‘আমার ছেলে মো. ইয়াকুব আন্দোলনে গিয়েছিল। সে নিউমার্কেটের একটি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান ছিল। গোপনে ছাত্র আন্দোলনে যেতো। আমি তার দেখা না পেয়ে জিজ্ঞাসা করতাম তুমি কোথায় যাও? কিন্তু সে কিছুই বলতো না। গত বছরের ঘটনা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল নাজিমুদ্দিন রোডে আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় ইয়াকুব। গুলি লাগার কথা শুনে আমি চিৎকার করে বাসা থেকে বেরিয়ে গলিতে যাই। কিন্তু মহল্লার লোকজন আমাকে যেতে দেননি।’
‘জানানো হয় আপনার ছেলে সুস্থ আছে। তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় আমার ছেলের বয়স ছিল ৩৫ বছর। প্রতিবেশীরা কান্নাকাটি শুরু করলে আমার সন্দেহ হয় যে, ছেলের কিছু হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে দেখি আমার ছেলের মরদেহ খাটিয়ায় করে গলির ভেতর নিয়ে আসে। শহিদসহ অনেকেই ছিলেন। ছেলের শরীর থেকে তখনও খাটিয়া বেয়ে অনেক রক্ত পড়ছিল। এরপর কাপড় সরিয়ে দেখি পেটে গুলি লেগে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। ভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে, রক্ত পড়া থামছে না।’
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘আমি পরবর্তীতে টিভি নিউজ, ভিডিও ও বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি, যারা গুলি করেছে তারা ছাপা কাপড়ের পোশাক পরা ছিল। পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে পড়ে যায়। এই দৃশ্য নিজের মোবাইলে ধারণ করেছিলেন প্রতিবেশী শহীদ। আমি তা টিভি নিউজে দেখেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আমি ভিডিও দুটি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজ দিয়েছি।’
এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইয়াকুবের মা বলেন, ‘যারা আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, যারা নির্দেশ দিয়েছিল তাদের বিচার চাই। আমি হাসিনা, কাউয়া কাদের ও যারা ওখানে ছিল, যারা এই আদেশ দিয়েছে তাদের সবার বিচার চাই।’
ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, তারেক আবদুল্লাহসহ অন্যান্যরা।
এদিন এ মামলায় রহিমাসহ তিনজন সাক্ষী নিজেদের জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যরা হলেন- শহিদ ইয়াকুবের প্রতিবেশী চাচা শহিদ আহম্মেদ ও শহিদ মো. ইসমামুল হকের ভাই মহিবুল হক। তারা তিনজনই আসামিদের বিচার ও ফাঁসি চেয়েছেন। এখন পর্যন্ত এ মামলায় সাক্ষী দিয়েছেন ছয়জন।